সিনেমা হলে জোয়ার তুলেছে অ্যানিম্যাল। রণবীর কাপুরের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট এটি। ভারতে ৬ দিনেই ৩০০ কোটির ব্যবসা করে ফেলেছে এই সিনেমা। তবে সমাজের একাংশ কিন্তু অ্যানিম্যাল নিয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছেন। যাতে এবার সামিল হলেন ছত্তিশগড়ের সাংসদ রঞ্জিত রঞ্জন। নয়াদিল্লিতে চলা রাজ্যসভার শীতকালীন সংসদ অধিবেশনে ‘অ-বিধায়ক বিষয়গুলির’ (non-legislative matters) আলোচনার সময় রঞ্জিত বলিউড চলচ্চিত্র 'অ্যানিম্যাল'-এর নিন্দা করেছেন। তাঁর দাবি, এই সিনেমায় দেখানো হিংস্রতা দেশের জন্য খারাপ হতে পারে।
'সিনেমা আমাদের সমাজের একটি প্রতিচ্ছবি… আমরা সিনেমা দেখে বড় হয়েছি এবং এটি আমাদের সকলের উপর, বিশেষ করে তরুণদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু 'কবীর সিং', 'পুষ্পা', এবং এখন 'অ্যানিম্যাল'-এর মতো সিনেমাগুলি ইদানীং প্রকাশিত হচ্ছে যেখানে হিংসাকে মহিমান্বিত করা হচ্ছে', বলতে শোনা গেল রঞ্জনকে।
রঞ্জন বর্ণনা করেন যে, তাঁর মেয়ে এবং তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা অ্যানিম্যাল দেখতে বসে ‘মহিলাদের প্রতি অসম্মান’ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এবং সিনেমা হল ছেড়ে চলে যান।
‘বলিউড যেটাকে ন্যায্যতা দিচ্ছে সেটা ভীতিকর। উদাহরণস্বরূপ, 'কবীর সিং' ছবিতে প্রধান অভিনেতা তার প্রেমিকার সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, এবং এখন দেখুন অ্যানিম্যাল-এ অভিনেতা তার স্ত্রীরসঙ্গে কেমন আচরণ করছে। তারা তাদের সিনেমার মাধ্যমে এই হিংস্রতাকে ন্যায্যতা দিচ্ছে’, আরও বলেন রঞ্জন।
সাম্প্রতিক ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে। ২০২২ সালে নথিভুক্ত ডেটা বিষ্ময়কর। দেখা গিয়েছে যে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৫১টি এফআইআর নিবন্ধিত হচ্ছে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) অধীনে মহিলাদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ অপরাধ ছিল স্বামী বা তার আত্মীয়দের দ্বারা (৩১.৪ শতাংশ)। তারপরে মহিলাদের অপহরণ (১৯.২ শতাংশ), ধর্ষণ (৭.১ শতাংশ)। দেশের মধ্যে দিল্লিতে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সর্বোচ্চ হার নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এদিন কিংবদন্তি শিখ যোদ্ধা অর্জন সিং নালওয়াকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তৈরি গান ‘অর্জুন ভাইলি’-রও সমালোচনা করেন। ‘পঞ্জাবের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, হরি সিং নলওয়ার কৃতিত্বও অনস্বীকার্য। গানটি চলে 'ওহ পার জোড়কে গান্দাসি মারি অর্জুন ভাইলি নে'। তারা এই ইতিহাসকে দুটি পরিবারের মধ্যে চলা একটা গ্যাং ওয়ারে ব্যবহার করছে। যেখানে একটি ছেলে তার বাবার ভালবাসার জন্য লড়াই করে, এবং হোস্টেলের চারপাশে ঘোরাফেরা করছে, মানুষ হত্যা করছে… এবং আমরা সিনেমায় এসব হওয়াকে ন্যায্যতা দিচ্ছি।’
‘গুরু গোবিন্দ সিং জি, যখন মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তিনি সেনাবাহিনীকে অনুপ্রাণিত করার জন্য এই লোকগানগুলি ব্যবহার করেছিলেন। আর এটাকে আমরা হিস্রতার পটভূমিকায় নিয়ে গিয়ে ফেলছি। আমাদের সমাজের জন্য খারাপ এই জাতীয় সিনেমাগুলিকে সংসদীয় বোর্ড কীভাবে সবুজ আলো দিতে পারে?’, বলেন রঞ্জন।