বলিউডের অন্যতম সেলিব্রেটেড জুটি হেমা মালিনী এবং ধর্মেন্দ্র। তবে তাঁদের প্রেম কাহিনি হার মানাবে যে কোনও বলিউড ফিল্মের চিত্রনাট্যকে। হেমা-ধর্মেন্দ্র যখন একে অপরের প্রেমে পড়েন তখন ধর্মেন্দ্র আগেভাগেই বিবাহিত ছিলেন। প্রকাশ কৌর ও তাঁর দুই সন্তানও ছিল- সানি আর ববি। সহজ ছিল না পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে জীবন কাটানো। কিছুটা মনমরা হয়েই, পরিবারের কথা ভেবে জিতেন্দ্রর সঙ্গে বিয়েতে একটা সময় রাজিও হয়ে যান হেমা মালিনী।
রাম কমল মুখোপাধ্যায়ের লেখা হেমার বায়োপিক, বিয়ন্ড দ্য ড্রিম গার্লে অভিনেত্রী নিজে জানিয়েছেন, জিতেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর বিয়ের দিন মদ খেয়ে ধর্মেন্দ্র তাঁর মাদ্রাস (চেন্নাই)-এর বাড়ির দরজায় পৌঁছান।
শুরু থেকেই হেমার পরিবার ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে নায়িকার সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিল। কোনও বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক মেনে নেবে না পরিবার। আগেভাগেই সেকথা আঁচ করতে পেরে শুরুর দিকে নিজেদের সম্পর্কটা সকলের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন হেমা-ধর্মেন্দ্র। তবে মেয়ের মন বুঝতে পেরে যান হেমার মা, জয়া দেবী। এরপর বাড়িতে রীতিমতো কুরুক্ষেত্র।
হেমার রূপের জাদুতে মুগ্ধ প্রেমিকের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না, জিতেন্দ্র থেকে সঞ্জীব কুমার সকলেই আপন করে নিতে চেয়েছিলেন স্বপ্ন সুন্দরীকে। যদিও হেমার কাছে তাঁরা ছিলেন শুধু বন্ধু, কারণ বহু আগেই ধর্মেন্দ্রকে মন দিয়ে ফেলেছিলেন হেমা মালিনী। হেমার পরিবার ও জিতেন্দ্রর পরিবারও চেয়েছিল তাঁদের চার হাত এক হোক। হেমার বায়োগ্রাফিতে লেখা রয়েছে, জিতেন্দ্র নিজেও বুঝেছিলেন হেমাকে তিনি ভালোবাসেন না। এবং হেমা অন্য একজনকে ভালোবাসে। তবে পরিবারের কথা ভেবে বিয়েতে রাজি হন তিনিও। কারণ শুধু সুন্দরী নন, ভালো মনের মেয়ে ছিলেন হেমা মালিনী।
মিডিয়ার অগোচরে চুপিসাড়ে মাদ্রাস-এ (বর্তমানে চেন্নাই) বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই পরিবার। তবে এক স্থানীয় সংবাদপত্রে খবরটি ফাঁস হয়ে যায়, আগুনের গতিতে এই ব্রেকিং নিউজ পৌঁছায় বোম্বাইতে ( বর্তমানে মুম্বই)। জোর ধাক্কা খান ধর্মেন্দ্র, সময় নষ্ট না করে হেমার প্রেমিক পৌঁছে যান জিতেন্দ্রর সেইসময়কার গার্লফ্রেন্ড শোভা সিপ্পির (বর্তমানে স্ত্রী) কাছে। এবং এই বিয়ে আটকাতে একসঙ্গে তাঁরা রওনা দেন মাদ্রাসের উদ্দেশ্যে।
বিয়ের মন্ডপ তৈরি ছিল, আচমকাই হাজির হয়ে যান ধর্মেন্দ্র-শোভা। হেমার বাবা ধর্মেন্দ্রকে সেখানে দেখেই মেজাজ হারান, এমনকি তাঁকে ঘাড়ধাক্কাও দেওয়া হয়। তবে হেমার সঙ্গে দেখা না করে ফিরে যাবেন না তিনি, গোঁ ধরে বসে থাকেন ধর্মেন্দ্র। অবশেষে একা হেমার সঙ্গে কথা বলবার অনুমতি মেলে। বাইরে চরম উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করেন, জিতেন্দ্র এবং হেমার গোটা পরিবার, হাজির ছিলেন শোভা ও ম্যারেজ রেজিস্টারও।
ঘরের ভিতর হেমার কাছে হাতজোড় করে প্রেমভিক্ষা করেছিলেন বিবাহিত ধর্মেন্দ্র। জানিয়েছিলেন ভালোবাসা ভুলে শুধু পরিবারের কথা মেনে জিতেন্দ্রকে বিয়ে করলে ‘বড় ভুল’ করবেন হেমা। বাইরে শোভাও জিতেন্দ্রকে কম কথা শোনাননি, প্রেমের সম্পর্ক ভুলে হেমাকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ার জন্য। হেমা-ধর্মেন্দ্র যখন ঘর থেকে বাইরে আসেন, হেমার চোখ কান্নায় লাল হয়ে গিয়েছিল। জিতেন্দ্রর পরিবারের কাছে প্রশ্ন করা হয়, তিনি এই বিয়েতে রাজি কিনা? মাথা নেড়ে অসম্মতি জানিয়ে দেন হেমা। এরপর অপমান সহ্য করতে না পেরে পরিবারকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান জিতেন্দ্র।
বাবার মৃত্যুর পর ১৯৮০ সালের ২রা মে বিয়ে করেন হেমা-ধর্মেন্দ্র। করোনা আবহেই নিজেদের ৪১তম বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন হেমা ও ধর্মেন্দ্র। দুই মেয়ে এষা আর আহানা এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে সুখী গৃহকোণ হেমার। হেমাকে বিয়ে করলেও প্রকাশ কৌরের সঙ্গে কোনওদিনই সম্পর্ক ভাঙেননি ধর্মেন্দ্র। বিয়ের ৪১ বছর পরেও ধর্মেন্দ্রর পৈতৃক ভিটেতে ঢোকবার অনুমতি পাননি হেমা। আলাদাই পেতেছেন সংসার, হেমার কথায় তিনি কোনওদিন চাননি অন্যের সংসার ভাঙতে। শুধু চেয়েছিলেন নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে নিতে।