আলোচনায় বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’। ওয়েব ফিল্মটি মুক্তির আগে থেকেই চর্চায় ছিল। তবে মুক্তির পর ‘খুফিয়া’ শুধু এদেশেই নয়, বাংলাদেশেও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। সৌজন্যে টাবুর সঙ্গে বাঁধনের রসায়ন। ‘খুফিয়া’তে সমকামী ‘হিনা রহমান’ ওরফে ‘অক্টোপাস’-এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের বাঁধন। 'খুফিয়া'তে নিজের চরিত্র, টাবুর সঙ্গে রসায়ন, বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে কাজ সহ নানান কিছু নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন বাঁধন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন একটা চরিত্র তুলে ধরাটা একটা সাহসী পদক্ষেপ, কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
বাঁধন: বাংলাদেশে আমার যে দর্শকশ্রেণী, তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় আমি মুগ্ধ। এমনকি ভারতের দর্শকদের থেকেও ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। আমার দেশের দর্শক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই আমার চরিত্রটি গ্রহণ করেছেন। অক্টোপাস (বাঁধন) ও কৃষ্ণা মেহরার (টাবু) অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি-তাঁদের পছন্দ হয়েছে, এটা নিয়েই এখানে বেশি চর্চা হচ্ছে। টাবুর সঙ্গে আমার রসায়নটা ভীষণই কাব্যিক, এই রসায়নের একটা আলাদা ছন্দ আছে, যেটা দ্য গ্রেট বিশাল ভরদ্বাজ তুলে ধরেছেন। আসলে বাংলাদেশে আমার একটা আলাদা দর্শক আছে, তাঁরা অনেক বেশি প্রগতিশীল ও সংবেদনশীল। আর ওঁরা এটাকে সুন্দরভাবেই গ্রহণ করেছেন। তাতে আমি খুশি।
এধরনের একটা চরিত্র করার আগে সমালোচনার ভয় কি ছিল?
বাঁধন: আমি একজন অভিনেতা। যে চরিত্র আমাকে টানবে, চ্যালেঞ্জিং মনে হবে সেই চরিত্রটি বেছে নেওয়ার অধিকার আমার আছে। ‘খুফিয়া’তে কাজ করার সিদ্ধান্তটাও সেকারণেই নিয়েছিলাম। এছাড়াও আমার পরিচালক কে? সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আর এখানে পরিচালক ছিলেন দ্য গ্রেট বিশাল ভরদ্বাজ। আর এখানে সহ অভিনেত্রীও আমার কাছে বড় বিষয় ছিল, কারণ আমার বিপরীতে রয়েছেন টাবু, যিনি আমার ভীষণ পছন্দের অভিনেত্রী। এই সবকিছু মাথায় রেখেই আমি এই কাজটা বেছেছি।
আরও পড়ুন-‘টাবুতে মুগ্ধ, প্রেমে পড়ে গিয়েছি’, অকপট বাঁধন, হয়েছে উপহার দেওয়া-নেওয়া
টাবুর সঙ্গে অনক্রিন কেমিস্ট্রি নিয়ে পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের কাছে কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
বাঁধন: দুর্দান্ত। আমার পরিবার, কাছের বন্ধুবান্ধব সকলেই আমার সিদ্ধান্ত, অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। আসলে বিশাল ভরদ্বাজের এই প্রেমটা কাব্যিকভাবে তুলে ধরেছেন। আর টাবু তো অবশ্যই এখানে বড় ফ্যাক্টর। এই সবকিছুতেই আমার পরিবার বন্ধুবান্ধবরা বেশ মুগ্ধ। অনেকেরই আমার অনেক ডায়ালগ মুখস্থ করে ফেলেছেন, এটা একটা ভালো লাগার জায়গা, অভিনেত্রী হিসাবে এটা আমার কাছে একটা পাওয়া।
'খুফিয়া' দেখে বাঁধনে মুগ্ধ আপনার দেশের আরও অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, কী বলবেন?
বাঁধন: হ্যাঁ, প্রশংসা পেতে তো ভালোই লাগে। বন্যা মির্জার প্রশংসা পেয়ে অবশ্যই ভালো লেগেছে। তবে শুধু উনি নন, পিঙ্ক-এর পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীও আমার প্রশংসা করেছেন। মুম্বই-দিল্লির অনেক নামী ফিল্ম সমালোচক আমার অভিনয়, আমাদের এই রসায়নের প্রশংসা করেছেন। তো এটা তো অবশ্যই ভালো লাগছে। আমি ভীষণ খুশি।
‘অক্টোপাস’ ও 'কৃষ্ণা'র ঘনিষ্ঠ দৃশ্য, যেটা নিয়ে চর্চা হচ্ছে, সেটার দৃশ্যায়ন কীভাবে হয়েছিল?
বাঁধন: টিম 'খুফিয়া' ভীষণই পেশাদার। তাই পেশাদারিত্বের সঙ্গেই কাজ হয়েছে। আমরা যখন শট দিয়েছি, তখন সেটটা খালি করে দেওয়া হয়েছিল। মনিটরটা নিচে রাখা হয়েছিল। সেটে ছিলাম, শুধু আমি, টাবু, বিশালজি আর সিনেমাটোগ্রাফার। এক টেকেই শ্যুট হয়েছে। আগেই ব্লকিং ক্যামেরা সহ করে নিয়েছিলাম। এছাড়াও মুভমেন্ট, কতটুকু কোথায় কী অভিব্যক্তি থাকবে, সেসবই আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তাই এটা করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।
এবার একটু অন্যরকম প্রশ্নে আসি। একসময় আপনাকে বৈবাহিক জীবনে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, যেটা নিয়ে আপনি বহুবার কথাও বলেছেন, এই অভিজ্ঞতাই কি আপনাকে অভিনেত্রী হিসাবে আরও বেশি দৃঢ়চেতা করে তুলেছে?
বাঁধন: শুধু বৈবাহিক জীবনের সমস্যা নয়, জীবনের সমস্ত লড়াই-ই আমাকে অভিনয়ে এবং অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে গড়s তুলতে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। যেহেতু আমার থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তাই জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে ভালো অভিনেত্রী হতে পথ দেখায়।
‘সিঙ্গল মাদার’ হিসাবে মেয়েকে একা বড় করে তুলছেন, সেটা কতটা চ্যালেঞ্জি?
বাঁধন: অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। কারণ, মেয়েদের উপর সমাজের চাপ তো সবসময়ই থাকে। বাবা-মা আলাদা হয়ে গেলে, অনেকে ক্ষেত্রেই বাবারা সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চান না। বাবা বা মা দুজনেই যেই সন্তানকে বড় করে তোলার দায়িত্ব নিন না কেন, অনেকক্ষেত্রেই দায়িত্বটা আসলে একজনের উপর দায়িত্ব পড়ে যায়। সেটা বেশিরভাগ সময়ই মায়ের উপরই পড়ে। তাই বিষয়টা তো কঠিনই। কারণ, তখন একটা মাকে বাচ্চার জন্য, সামাজিক, মানসিক, আর্থিক সবরকম ভাবে সন্তানের পাশে থাকতে হয়। যে কাজটা বাবা-মা দুজন মিলে করার কথা, সেটা যখন একজনকে করতে হয়, সেটা তো একটু কঠিন বটেই। বাবা-মা আলাদা হয়ে যাওয়ার পরও বাবাও যদি বাচ্চার দায়িত্বের প্রতি সচেতন হন, সেক্ষেত্রে হয়ত অতটাও সমস্যা হয় না। তবে আমি নিজের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ ফেস করেছি, দায়িত্ব পালন করেছি, ভবিষ্যতেও করে যাব।