একসঙ্গে একই গল্প নিয়ে আলাদা দুটি পিরিয়ড ধারাবাহিক দুই গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলে, সেক্ষেত্রে লিড রোলে চাপটা একটু বেশি নয় কি?
( অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ) অনেস্টলি বলছি এই প্রশ্নটার উত্তর আমি একদমই দেব না। আমি এটা এড়িয়েই গেলাম। কিন্তু যেটা শেয়ার করতে চাই সেটা হল, শুধু এই কাজটা বলে নয়, আমি এখনও পর্যন্ত যা যা কাজ করেছি প্রত্যেকটা কাজের জন্যই যথেষ্ট পরিশ্রম করি। পাঁচ বছর হতে চলল আমি ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। যাঁরা আমায় কাছ থেকে জানে, চেনে, তাঁরা দেখেছেন প্রথম থেকেই আমি প্যাশনেটলি এবং ডেডিকেশনের সঙ্গে কাজটা করি।
বকুল কথা সুপার হিট। এবার কাদম্বিনী, দুটি ভিন্ন স্বাদের চরিত্র। চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বোঝাপড়াটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
প্রথম কাজে যে চাপটা থাকে সেটা স্বভাবতই পরের কাজে কম থাকবে বলে আমরা মনে করি, কিন্তু যখন দ্বিতীয় কাজটা শুরু হয় তখন দেখা যায় কোনও অংশে চাপ কম নয়, সেই একই প্রেসার।‘বকুল কথা ’ যখন শুরু করলাম তখনও আমার টেনশন হয়েছিল। অ্যনজাইটিও হচ্ছিল। তখন সেটাকে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ ওই চরিত্রটা ছিল একদম অন্যরকম, শর্ট হেয়ার, টমবয় লুক, ডানপিটে একটি মেয়ের গল্প। এর আগে ওই ধরণের চরিত্র বাংলা মেগা সিরিয়ালে দেখা যায় নি। তো আমার মনে হয়েছিল আমি যদি এই চ্যালেঞ্জটা ওভারকাম করতে পারি তাহলে আমার জীবনে পরবর্তী কাজের ক্ষেত্রে আর কোনও টেনশন থাকবে না।
বকুল কথা-র পর আমার কাছে কাদম্বিনীর অফার আসে। এই রকম একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত পিরিয়েড ধারাবাহিক, এবং তাতে আমার যে চরিত্র সেটা নিজের কাছে আরও একটা চ্যালেঞ্জ। কাদম্বিনী করতে করতে আমার মনে হয়েছে, যেহেতু কাজটাকে ভীষণ ভালোবাসি সেই কারণেই সবসময় একটা টেনশন রয়েছে। যেমন রেজাল্ট বেড়োনোর সময় থাকে! সেই টেনশন ছাড়া কিন্তু অন্য কোনও টেনশন আমার নেই।আমি এমনিই হার্ড ওয়ার্কিং, খেটে কাজ করতে ভালোবাসি। যে কোনও কাজের ক্ষেত্রেই যেভাবে পরিশ্রম করি সেটাই করছি কাদম্বিনীর ক্ষেত্রেও। আলাদা করে কিছু নয়।
কাদম্বিনীর জন্য বিশেষ কোনও ওয়ার্কশপ বা প্রস্তুতি কিছু?
বেনীদি অর্থাৎ দামিনী বসু আমার টিচার, তিনি আমায় খুব সাহায্য করেছেন। আলাদা করে কোনও ওয়ার্কশপ আমি করি নি। যাঁরা আমায় এই চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেছেন এবং আমার ডিরেক্টর সহ ফ্লোরে যাঁরা থাকেন তাঁরা সকলে আমার প্রতি ভরসা রেখেছেন এবং কাজটা করতে সাহায্য করেছেন।

সাধারণত যেটা হয়, এই ধরণের চরিত্রের ক্ষেত্রে আর্টিস্টদের ওপর অনেক কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়। যেমন, এভাবে এটা করতে হবে, ওইভাবে ওই দিকে তাকাও, ইত্যাদি। আমাকে কিন্তু কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়নি কাদম্বিনীতে। আমি আমার মতো করেই করছি। এবং ভয়-ডড় ছাড়া নিজেকে সম্পূর্ণ মেলে ধরেছি এই চরিত্রে, আর সেটা সম্ভব হয়েছে আমার কোচ, দামিনী বসুর জন্য। উনি না থাকলে আমি এতটা সাবলীলভাবে অভিনয়টা করতে পারতাম না।
একজন অসামান্যা নারীর জীবন কথা, মূল বিষয়টাই দাঁড়িয়ে রয়েছে রিসার্চ ওয়ার্কের ভিত্তিতে। কেমন লাগছে এই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে?
মন থেকে বলছি প্রচণ্ড ভালো লাগছে। একজন অভিনেত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে চাই, এই চরিত্র পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। জি-বাংলা চ্যানেল খুব সুন্দর করে প্রেজেন্ট করছে পুরো বিষয়টা। প্রচুর পড়াশোনা করে অনবদ্য একটি রিসার্চ ওয়ার্ক এই প্রজেক্ট। আমি নিজে এই চরিত্রটা করার আগে বেশ কিছুটা সময় বইপত্র ঘেটে কাদম্বিনী নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে দেখলাম কাদম্বিনীর যা রিসার্চ এখানে হয়েছে তার ডিটেলিং মারাত্মক! আমি যা জেনেছিলাম সেটা আসলে কিছুই না! এখানে কোথাও কোনও ফাঁক নেই। শিবাশিস বন্দোপাধ্যায় এবং শাশ্বতী ঘোষ সম্পূর্ণ রিসার্চের কাজটি করেছেন। পোষাক পরিকল্পনা সাবর্ণী দাস। আমি প্রতিদিন যেন আরও ভালো করে চিনছি এবং জানছি কাদম্বিনীকে। শুধু কাদম্বিনীকে জানা নয়, সেই সময়কার সমাজ, মানুষজন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, সামাজিক পরিকাঠামো, মানুষের চিন্তাধারা ইত্যাদি বিষয়গুলো আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, যা চরিত্রটি যাপন করার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ধারাবাহিকটি দেখতে বসে মানুষ যেন ওই সময়টার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারেন। এখন আমার প্রতিদিন মনে হচ্ছে আরে বাহ, এই রকম একটা প্রজেক্টের সঙ্গে আমি যুক্ত!

কেমন ছিল ছোটবেলাটা? টেলিভিশনে আসা কেমন করে?
মূলত আমার থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড। ছোটবেলা থেকেই কলকাতায় বড় হওয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রুপ থিয়েটারটা জড়িয়ে ছিল আমার বেড়ে ওঠার সঙ্গে। ছোটদের দলে ছিলাম। স্বপ্ন সন্ধানী সহ আরও কিছু গ্রুপ থিয়েটারে কাজ করি, তারপর বোর্ড পরীক্ষার সময় বাড়ি থেকে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন একটা লম্বা গ্যাপ নিয়েছিলাম মন দিয়ে লেখাপড়ার জন্য। যেহেতু ছোটবেলা থেকে আমার ন্যাক ছিল অভিনয়ের প্রতি তাই গ্র্যাজুয়েশনের পর আবার অভিনয়ের জগতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন থেকেই অডিশন দেওয়া শুরু করি। ছবি পাঠাতে থাকি বিভিন্ন হাউসে, তবে সেগুলো আলাদা করে কোনও পোর্টফোলিও শুট করা ছবি নয়। সেখান থেকেই অডিশনে সুযোগ পাওয়া এবং মেগা সিরিয়ালে ব্রেক পাওয়া।
কাদম্বিনীর দর্শকদের জন্য বিশেষ কোনও বার্তা?
যাঁরা কাদম্বিনী দেখছেন, তাঁদের বলব, সবে তো দু'দিন হয় টেলিকাস্ট শুরু হয়েছে, একটু ধৈর্য্য ধরে দেখতে থাকুন। মেগা সিরিয়াল তো আসলে একটা জার্নি, প্রতিটা পথের বাঁকেই লুকিয়ে থাকে নতুন নতুন ঘটনা, যত পথ এগিয়ে চলা ততই ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠবে এই জার্নিটা। তাছাড়া একটা ফেলে আসা সময়ের সমাজ, চরিত্র, ধারণা, সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে তো কিছুটা সময় লাগেই। আমি এইটুকু বলব, যদি কাদম্বিনী দেখতে গিয়ে কারও কোথাও কোনও কনফিউশ হয় বা কোনও প্রশ্ন থাকে তাহলে অথেন্টিক বইপত্র পড়ুন, ইন্টারনেটে খোঁজ করুন। আমাদের রিসার্চ টিম সহ ধারাবাহিকের পুরো টিম প্রচুর খেটে যথাযত কাহিনি তুলে ধরেছেন দর্শক মহলে। আমাদের ওপর ভরসা রাখুন। কাদম্বিনী দেখুন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনে দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। মাথায় বা গায়ে হাত রেখে কোনও দৃশ্য শুট করা যাচ্ছে না। সেখানে ইমোশন ব্রেক তো হচ্ছেই। দেখতে গেলেও একটুতো চোখে লাগছেই। আশাকরি দর্শকরা সমস্যাটা বুঝবেন। এই পরিস্থিতিতে কিছু করারও তো নেই! আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে, ইমোশন বজায় রেখেই কাজটা করতে।