যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাবালক ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিংয়ের অভিযোগ নতুন নয়, তবে বাংলা বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্রের অপমৃত্যুর ঘটনায় ভয়াবহ পরিস্থিতি। মুক্ত চিন্তার আতুরঘর বলে পরিচিত দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ‘ইন্ট্রো’র নামে প্রতিদিন সিনিয়রর জুনিয়রদের উপর যে অকথ্য অত্যাচার চালায় ধীরে ধীরে সেই হাড়হিম করা তথ্য সামনে আসছে।
নদীয়ার ওই নবালকের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় যাদবপুর নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন অরিত্র দত্ত বণিক। একসময় টলিপাড়ার নামী শিল্পীশিল্পী অরিত্র। ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ থেকে শুরু করে ‘চ্যালেঞ্জ’ কিংবা ‘খোকাবাবু’-র মতো বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন। ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ জুনিয়র (২০০৭)-এ সঞ্চালনাও করেছিলেন অরিত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলাখুলিভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে ওস্তাদ তিনি। যাদবপুরের প্রাক্তন ছাত্র হওয়ার সুবাদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খুটিনাটি ভালোভাবেই জানেন তিনি। এক ভিডিয়োয় অরিত্র জানিয়েছিলেন, ‘প্রাক্তনীরা হোস্টেলে দাদাগিরি করে’। শুধু তাই নয়, শিক্ষকরাও র্যাগিং করে থাকেন।
অরিত্রর সেই ভিডিয়ো পোস্টে মন্তব্যের বন্যা। অনেকেই তাকে সমর্থন জানিয়েছেন, আবার অনেকে ‘সবজান্তা’ অরিত্রকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। অনেকে তো অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন অরিত্রকে। যাদবপুরের এক ছাত্র লেখেন- ‘অরিত্রর ইন্টারনেটটা কেউ কেটে দিলে আমরা সত্যি স্বাধীন হয়ে উঠব’। এই নিয়ে ফের প্রতিবাদী অরিত্র।
স্বাধীনতা দিবসের দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া ভাষায় অভিনেতা লেখেন- 'যাদবপুরের ভন্ডামির বিরুদ্ধে বললেই হয় খিস্তি করবে, অন্যকে ছোট করবে, বুলি করবে। এঁদের এই কালচার বহু পুরোনো এরা আবার র্যাগিং নিয়ে বাতেলা দেয়। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির আসল চেহারাগুলো এভাবেই কখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় কখনো হোস্টেলে বেরিয়ে আসে। এদের পক্ষে বললে আপনি ভগবান কিন্তু বিপক্ষে বললেই আপনি ‘গা**’। এই হচ্ছে যাদবপুরের ও কোলকাতার অধিকাংশ মানুষের মুক্তচিন্তা।
যাদবপুরের কলা বিভাগে পড়াশোনা অরিত্রর। তিনি এর আগে অভিযোগ করেন, শিক্ষকরাও র্যাগিং করে থাকেন। তাঁর ব্যাচেই তিনি এরকম দেখেছেন। কুচবিহার বা উত্তর দিনাজপুর বা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা ছেলেমেয়েরা যাদের কথা অস্পষ্ট, তাঁদের অপমান করা হচ্ছে। বাংলা মিডিয়ামের পড়ুয়াদের বলা হচ্ছে, তোমরা সাধারণ সরকারি চাকরি করো। আর কনভেন্টের ছেলেদের বলা হচ্ছে হচ্ছে তোমরা গবেষণা করো। বাংলায় পড়াশোনা করলে অধ্যাপকরা নিজেরা খাতা না দেখে খাতা দেখায় জুনিয়র রিসার্চারদের দিয়ে।
প্রসঙ্গত, নদীয়ার নাবালক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুরে ফের সহ-উপাচার্য ও ডিন অফ স্টুডেন্টসকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চলেছে পুলিশ। এই ঘটনায় প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরী-সহ দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।