সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়ের সাধের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রোমোটার। লেক গার্ডেন্সের পোস্ট অফিস গলিতে অবস্থিত এই বাড়ির পোশাকি ঠিকানা-ডি/৬১৩। সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়ের মৃত্যুর দেড় বছরের মধ্য়েই ভাঙা পড়ল বাড়ি। সবটাই হয়েছে মেয়ে সৌমীর সম্মতিতে। ‘গীতশ্রী’র বাড়ির করুণদশা দেখে চোখ ছলছল নেটপাড়ার। প্রয়াত শিল্পীর স্মৃতিবিজরিত বাড়ি আগলে রাখতে না পারায় উপচে পড়ছে ক্ষোভ। যে বাড়ির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিল বাংলা গানের স্বর্ণ যুগের অমূল্য মুহূর্ত, তা আজ ধ্বংসস্তূপ। তার মাঝেই ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে বড়ে গুলাম আলি খাঁ-র ছবি। যাঁকে ভগবানের আসনে স্থান দিয়েছিলেন গীতশ্রী। আরও পড়ুন-মৃত্যুর দেড় বছরের মধ্য়েই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়ের বাড়ি! ক্ষুব্ধ অনুরাগীরা
সেই ছবি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় বন্দি হওয়ার পরেই ছিছিকার নেটপাড়ায়। এই দৃশ্য দেখে সঙ্গীতপ্রেমীদের পাশাপাশি মনখারাপ হয়ে যায় গায়িকা কৌশিকী চক্রবর্তীর। এই মুহূর্তে জার্মানিতে রয়েছেন কৌশিকি। অসহায় গায়িকা সাহায্য চান নেটিজেনদের কাছে। কেউ যেন দয়া করে উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁর ছবিটি উদ্ধার করেন, ফেসবুকে কাতর আর্তি ছিল কৌশিকির। শিল্পীর ডাকে সাড়া দেন লেক গার্ডেন্স অঞ্চলেরই বাসিন্দা মানবী। ছবি উদ্ধার করে পৌঁছে দেন কৌশিকির কলকাতার বাড়িতে। সেই ছবি সসম্মানে স্থান পেয়েছে কৌশিকির ঘরের সিংহাসনে।
ফেসবুক পোস্টে কৌশিকি লেখেন, ‘আমার কাছে মানবীকে ধন্যবাদ জানানোর মতো কোনও ভাষা নেই আমার জন্য এই উপকার করার জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ার এই ক্ষমতা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়ের বাড়ির ধ্বংসস্তূপে খাঁ সাহেবের ছবি পড়ে থাকতে দেখে আমার মন ভেঙে গিয়েছিল। আমি জার্মানি বসে আছি, কোনওভাবেই ওখানে পৌঁছাতে পারতাম না। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা মাত্রই মানবী নিজের উদ্যোগে ওই ছবি সংগ্রহ করে আমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছে।’
এরপর কৌশিকি যোগ করেন, ‘আমি নিশ্চিত সন্ধ্যা পিসি জেনে খুশি হবেন ওঁনার গুরুর ছবিকে পুনরুদ্ধার করে সসম্মানে এবং সযত্নে রাখা হয়েছে। যার চারিপাশে সবসময় সঙ্গীত বিরাজমান থাকবে আমি কথা দিলাম’।
লেক গার্ডেন্সের ওই বাড়ি আসলে ছিল গীতশ্রী-র স্বামী, সুরকার-গীতিকার শ্যামল গুপ্তর। তাঁদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের সাক্ষী ছিল এই বাড়ি। পৈতৃক সম্পত্তি প্রোমোটারদের হাতে দেওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভের মুখে প্রয়াত গায়িকার কন্যা সৌমী। যদিও এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে না-রাজ তিনি। তাঁর সাফ কথা, ‘আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় এটি।’ পুরসভার তরফেও জানানো হয়েছে, 'এই নিয়ে আমাদের কিছু করার ছিল না। ওই বাড়িটি হেরিটেজ প্রপার্টি নয়, ব্য়ক্তিগত মালিকানাধীন'। কিন্তু তা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় থামছে না। নেটিজেনদের প্রশ্ন, ‘আরেকটু যত্নশীল হওয়া যেত না শিল্পীর শেষ স্মৃতিটুকু আগলে রাখতে?’