তিনি কঙ্কনা সেনশর্মা। অভিনেত্রী হিসাবে এই নামটির সঙ্গে সিনেমপ্রেমীদের পরিচয় করানোর প্রয়োজন নেই। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী তিনি। আবার পরিচালক হিসাবেও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের বিশেষ ছাপ রেখেছেন কঙ্কনা। আবার এটাও চরম সত্যি, যে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কিংবদন্তি অভিনেত্রী, পরিচালক অপর্ণা সেনের মেয়ে। যদিও সেই ব্যক্তিগত পরিচয় সরিয়ে নিজের বিশেষ পরিচয় তৈরি করতে সফল কঙ্কনা। তিনি শুধু মা অপর্ণার পরিচয়ে পরিচিত নন।
তবে অপর্ণা সেনের মেয়ে হিসাবে কখনও কি নিজের উপর কোনও চাপ অনুভব করেছেন? মায়ের সঙ্গে মেয়ের কি কখনও কোনও তুলনা চলে আসেনি?
সম্প্রতি এবিষয়েই ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী কঙ্কনা সেনশর্মা। কঙ্কনার কথায়, তিনি সবসময় তাঁর মায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও কাজের ক্ষেত্রে পার্থক্য আঁকতে চেয়েছিলেন, একটা সীমারেখা টানতে চেয়েছিলেন।
কঙ্কনা সেনশর্মার কথায়, ‘আমি অপর্ণা সেনের মেয়ে হওয়ার জন্য চিরকালই গর্বিত। তবে একইসঙ্গে সচেতন ছিলাম, দর্শকদের আমার কাছে আরও অনেক প্রত্যাশা থাকবে। কারণ আমি আমার মায়ের মেয়ে। এটা নিয়ে চিরকালই ভীষণ গর্ব হয়। তবে মায়ের সঙ্গে নিজেকে কখনওই তুলনা করিনি, এমন কোনও চিন্তাও কখনও মাথায় আসেনি। প্রায়ই সাংবাদিকরা আমার সঙ্গে আমার মায়ের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন। আমি বলব, একজন পরিচালক আসলে মায়ের মতোই। কারণ, একজন পরিচালক ও মা দুজনেই তৈরি করেন, লালন-পালন করেন, শৃঙ্খলাবদ্ধ হন, কারণ তিনিই যে ইউনিটের প্রধান। তাই বিষয়টা অনেকক্ষেত্রে একই।’
কঙ্গনা তাঁর মা অপর্ণা সেনের পরিচালনাতেও কাজ করেছেন, তবে তিনি কি কখনও চাপ অনুভব করেছেন? তাঁকেও তাঁর মায়ের মতো হবে হবে এই চাপ ছিল? এর উত্তরে কঙ্কনা জানান, ‘আমি কখনও বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণের চাপ অনুভব করিনি। আমার বাবা-মা আমায় সবসময়ই ব্যক্তি হিসাবে আমায় স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমি কোথায় যাচ্ছি , কখনও আসছি, কখন যাচ্ছি এবিষয়ে কখনওই মা হস্তক্ষেপ করেননি। মা আমাকে প্রাপ্ত বয়স্কদের বিষয়বস্ত থেকে শুরু করে সবকিছুই পড়তে, লিখতে দিয়েছেন। এতে কোনও সেন্সরশিপ ছিল না। কারণ, মাও শিক্ষিত কর্মজীবী মহিলাদের মধ্যে একজন। তিনি বিয়ে করেছেন, দেরিতে সন্তান এসেছে।’
কঙ্কনা তাঁর বেড়ে ওঠা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন মা মূলত একজন পরিচালক এবং সঙ্গে এক জনপ্রিয় ম্য়াগাজিনের সম্পাদক। যেটা খুবই বিখ্যাত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন। মহিলাদের বিষয়ে সেখানে নানান কিছু লেখা হত, উনি (মা) সম্পাদকীয় লিখতেন। মা যখন মেইনস্ট্রিম বাণিজ্য়িক ছবির নায়িকা, সেই কাজগুলো আমি বিশেষ দেখিনি, কারণ হয়ত আমি তখন খুবই ছোট্ট ছিলাম। তবে আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই উনি ভীষণ বিখ্যাত ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় মায়ের সঙ্গে যেতাম, অনেক সময় মায়ের রক্ষক হয়ে উঠতাম। অনেক সময় আমার মাও আমায় প্রশ্ন করতেন আমি এত আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে পাই… ’
কঙ্কনা জানান, তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহ-বিচ্ছেদ হলেও সেটা বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই হয়েছে। জানান, তিনি মায়ের সঙ্গে বড় হলেও অন্যশহরে থাকা বাবার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। বাবার সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল। কঙ্কনা জানান, তিনি লাজুক অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন, তবে তাঁর মা-ই তাঁকে বাড়ির আরাম ছেড়ে বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। কঙ্কনার কথায় ‘মা বলতেন যাও পড়াশোনা করো, অন্তত দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে। ওদের এত সুন্দর সুন্দর কলেজ আছে। যাও, তোমার যা খুশি করো, তবে পড়াশোনাটা করো।’