বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > 'তোর জন্য একটা শাড়ি কিনে রেখেছি', হৈমন্তীকে বলেছিলেন দিদি নির্মলা

'তোর জন্য একটা শাড়ি কিনে রেখেছি', হৈমন্তীকে বলেছিলেন দিদি নির্মলা

নির্মলার স্মতিচারণে হৈমন্তী।

নির্মলাদির সঙ্গে থাকলে মন খারাপ হওয়ার উপায় ছিল না। খুব হাসিখুশি ছিলেন। সবাইকে নিয়ে হইচই করতে ভালোবাসতেন। এখনও মনে পড়ে, মজার কোনও জিনিস দেখলেই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে সিটি দিতেন!

হৈমন্তী শুক্লা

কত কথা মনে পড়ছে আজ। ছবির মতো চোখের সামনে ভেসে উঠছে পুরনো দিনগুলো। নির্মলাদির সঙ্গে আমার সম্পর্ক পেশাগত গণ্ডির ঊর্ধ্বে। অভিভাবকের মতো আগলে রাখতেন আমাকে। আবার শাসনও করতেন। বলা ভালো স্নেহের শাসন। ভুল করলেই বকা খেতাম। বলতেন, 'তুই এটা করলি কেন? ওটা বললি কেন?' আসলে দিদির মতো না, উনি আমার দিদিই ছিলেন।

গানের ক্ষেত্রে সব সময় উৎসাহ দিতেন আমাকে। প্রশংসা যেমন করতেন, তেমন বলতেন ভুল শুধরে নেওয়ার কথা। আবার কখনও কখনও নিজে গান গেয়ে আমাকে প্রশ্ন করতেন, 'হ্যাঁ রে, আমি ঠিক মতো গাইতে পেরেছি তো? ভালো গাইতে পেরেছি?' নিজের কাজ নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে ছিলেন। প্রশংসা করলেও মানতে চাইতেন না। বলতেন, 'এতটাও ভালো হয়নি। তুই বাড়িয়ে বলছিস!' মানুষটার জীবন জুড়ে যেন শুধুই গান। তা নিয়েই যত কথা, যত চর্চা।

নির্মলাদির সঙ্গে থাকলে মন খারাপ হওয়ার উপায় ছিল না। খুব হাসিখুশি ছিলেন। সবাইকে নিয়ে হইচই করতে ভালোবাসতেন। এখনও মনে পড়ে, মজার কোনও জিনিস দেখলেই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে সিটি দিতেন! আর আমরা হেসে উঠতাম। সবাইকে মাতিয়ে রাখার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওঁর।

আরও একটা মজার কথা মনে পড়ছে। নির্মলাদি প্রচুর ওড়িয়া ছবিতে গান গেয়েছেন। অনেকেই তাই তাঁকে উড়িষ্যার মানুষ ভাবতেন। মজা করে উনি বলতেন, 'ওরে, আমি বাঙালি! ওই ভাষাটাকে রপ্ত করে নিয়েছি।' ওঁর মতো আমিও অনেক ওড়িয়া ছবিতে গান গেয়েছি। দেখা হলেই তাই মাঝেমধ্যে ওড়িয়া ভাষায় কথা বলতাম আমরা।

এমন প্রাণোবন্ত এক মানুষকে কতটা কষ্ট পেতে হল! এ সব তো ওঁর প্রাপ্য ছিল না। শেষের দিকে আমি আর ওঁকে দেখতে যেতাম না। নির্মলাদির ওই কষ্ট চোখে দেখা যেত না! মানুষটার কথা জড়িয়ে যেত। শরীরটা একেবারে অসাড় হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থাতেই আমাকে এক দিন বলেছিলেন, 'তোর জন্য একটা শাড়ি কিনে রেখেছি, কবে নিবি রে?' আমি তখন বলেছিলাম, 'এখন তোমাকে এ সব ভাবতে হবে না।'

সব কিছু ফেলে রেখে চলে গেলেন নির্মলাদি। রয়ে গেল তাঁর অজস্র গান আর স্মৃতি।

বন্ধ করুন