আশির দশকে যে সকল অভিনেতা বলিউডে রাজত্ব করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শত্রুঘ্ন সিনহা। আসানসোলের তৃণমূল সাংসদের কেরিয়ারের শুরুটা কেটেছে চরম টানাপোড়েন। এমনকী এমন হাল হয়েছিল যে নিজের বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করতে চেয়েছিলেন বিহারীবাবু। নিজের আত্মজীবনী ‘এনিথিং বাট খামোশ’এ সেই দুঃসময়ের কথা কলমবন্দি করেছেন শত্রুঘ্ন। দুর্দিনে বলিউড থেকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন একমাত্র সঞ্জীব কুমার।
শত্রুঘ্ন বইয়ের পাতায় লিখেছেন, ৮০ দশকের গোড়ায় তাঁর ১০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করবার কথা মনোস্থির করলেও বাধ সাধেন স্ত্রী পুনম। ‘আমি খুব আত্মসম্মানী,কারুর কাছে হাত পাততে আমার বিবেকে বাধে’, জানান অভিনেতা। ফিল্মমেকার সুভাষ ঘাইয়ের কাছে টাকা চেয়েছিলেন অভিনেতা, সাহায্য না করে সুভাষ ঘাই বলেছিলেন- ‘আমাকে সুদ দিতে হবে কিন্তু’। শত্রুঘ্ন সিনহা লেখেন, সঞ্জীব কুমার যেচে এগিয়ে এসে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। অভিনেতা লেখেন, ‘আমার বন্ধু, পথপ্রদর্শক সঞ্জীব কুমার, যিনি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই তিনি আমার বেহাল দশা থেকে জানতে চেয়েছিলেন কী হয়েছে? আমি যখন তাঁকে আমার সমস্যার কথা জানাই, তিনি শুধু প্রশ্ন করলেন-আমি টাকাটা কবে ফেরত দিতে পারব। আমি জানাই, যে মুহূর্তে আমার পক্ষে সম্ভবপর হবে। পরদিন সকালে ওঁনার সেক্রেটারি যুমনাদাসজি আমার বাড়িতে এলেন, কিছু না জানিয়েই। খবরেকাগজে মোড়া কিছু একটা নিয়ে উনি এসেছিলেন। এরপর বললেন, ‘ভাই আপনাকে একটা ভিডিয়ো ক্যাসেট পাঠিয়েছে। ওটাতে কোনও ক্যাসেট ছিল না। আমার যে পরিমাণ টাকার দরকার ছিল, সেটা উনি পাঠিয়েছিলেন। আমাকে কিছু না জানিয়েই উনি ওই টাকাটা পাঠান। আমি পরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওঁনাকে কত সুদ দিতে হবে। আমার আর ওঁনার একই জীবনদর্শন ছিল। বন্ধুদের মধ্যে সুদের কথা কেন আসবে?’
শত্রুঘ্ন সিনহা আরও জানান, ‘যখন টাকাটা ফেরত দেওয়া সম্ভবপর ছিল তিনি জানিয়েছিলেন। তবে সব টাকাটা ফেরত নেননি সঞ্জীব কুমার। কিছু কিছু করে টাকা নিতেন তিনি, যখন যেমন দরকার পড়ত। আমি নিজেও জানি না পুরো টাকাটা উনি ফেরত নিয়েছিলেন কিনা। বোধহয় কিছু টাকা আজও বাকি রয়ে গেছে। উনি চলে যাওয়ার পর আমি কাকে দিতাম ওই টাকা? ওঁনার সব সম্পত্তি নয়-ছয় হয়ে গেল’।
১৯৬৫ সালে ‘নিশান’ ছবির সঙ্গে বলিউডে পা রাখেন সঞ্জীব কুমার। দু দশক দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে ‘খিলোনা’, ‘ইয়ি হ্যায় জিন্দেগি’,'নায়া দিন নয়ি রাত'-এর মতো অজস্র হিট ফিল্ম উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘দস্তক’ (১৯৭০) এবং ‘কোশিশ’ (১৯৭২)- ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন অভিনেতা। যদিও দর্শক তাঁকে সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে ‘শোলে’ ছবির ঠাকুর হিসাবে। ১৯৮৫ সালের ৬ই নভেম্বর মাত্র ৪৭ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।