টলিউডে আজকাল একটা কথার খুব চল হয়েছে। যার সোশ্যাল মিডিয়াতে ফলোয়ার্সের সংখ্যা যত বেশি, সেই তত বেশি প্রোজেক্টে ডাক পাচ্ছে। দাবি, শুধু নায়ক-নায়িকা বাছাইয়ের ক্ষেত্রেই নয়, এমনকী পার্শ্বচরিত্রের ক্ষেত্রেও এমন খানিক নিয়মই নাকি চালু। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর বলা কিছু কথা যেন এই ‘রটনা’তেই শিলমোহর দিল।
শঙ্করকে বলতে শোনা গেল, ‘কোনওরকমে টিকে আছি। বাবা-কাকা-জ্যাঠার চরিত্রে লোক লাগবে বলে আছি আর কী। তবে বাজেট দিনদিন যা হচ্ছে, তাতে একটু বেশি টাকা চাইলেই এরা বাদ দিয়ে দেবে।’
এরপর বর্তমানের তরুণ প্রজন্মের উপরেও উগড়ে দিলেন ক্ষোভ। বলতে শোনা গেল, ‘এরা সেটে এসে রিলস বানাচ্ছে। ডিরেক্টর কী বলছে সেটা শুনছে না। এরপর যখন বলবে ডিরেক্টর শ্যুট শুরুর কথা, তখন যেন আকাশ থেকে পড়বে। আসলে কিছুই তো শোনেনি। একটু যে সেটে আসার আগে স্ক্রিপ্ট পড়বে, তারও কোনও বালাই নেই। এখন টিআরপি বলে একটা বস্তু হয়েছে। সেটা বাড়লেই মনে করবে ওদের জন্যই হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখন সিনিয়রদের সম্মান করার বিষয়ও নেই। বিশেষ করে নতুন অভিনেতা -অভিনেত্রীদের। হয়তো সামনে বসে আছেন সিনিয়র অভিনেতা তার সামনে পা তুলে দিচ্ছে। সামান্য সৌজন্যবোধ নেই।’
এর আগে শঙ্করকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে ঠিকমতো ব্যবহার করেনি। বহু সিনেমার কাজ চলে গিয়েছে হাত থেকে। ২০০৯ সালে সম্পূর্ণ বসে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে সিনেমা ছেড়ে সিরিয়ালেই মন দিয়েছেন।
তবু মনে রেখো, সংসার সংগ্রাম, উত্তরা, মেজো বউ, গোঁসাই বাগানে ভূত, জানবাজ-এর মতো সিনেমায় কাজ করেছেন। টিভিতে প্রথম কাজ ওগো বধু সুন্দরী। তোমায় ছাড়া ঘুম আসেনা মা, ভালবাসা ডট কম, এই ছেলেটা ভেলভেলেটা, চোখের তারা তুই, পটল কুমার গানওয়ালা, কুসুম দোলা, কুন্দ ফুলের মালা-র মতো সিনেমায় দেখা গিয়েছে তাঁকে।
বহুবার তাঁর মুখে উঠে এসেছে অতীতের দারিদ্র্যের প্রসঙ্গ। একেবারে শৈশবে হারান বাবাকে। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতাও ছিল না সেই সময় তাঁদের। মা-কে নিয়ে শুরু করলেন যুদ্ধ। সকালে স্কুলে যেতেন আর রাতে করতেন কারখানায় কাজ। ক্লান্ত থাকার কারণে কখনও হয়তো ঘুমিয়ে পড়তেন স্কুলেই। মাস্টার মশাই চুলের মুঠি ধরে তাঁকে টেনে তুলতেন। করতেন ভর্ৎসনা। বলতেন, ‘চুরি করিস নাকি’? একটা বস্তিতে ঘর নিয়েছিলেন। সংসারটাও চলত টেনেটুনে। এভাবেই বড় হয়ে ওঠা। তারপর সিনেমার জগতে আসা।
তবে পাশে পেয়েছিলেন স্ত্রীকে। তখনও অবশ্য বিয়েটা হয়নি। গান শিখিয়ে যে রোজগার হত, তা সবটাই শঙ্করের হাতে তুলে দিতেন সোনালী চক্রবর্তী। এমনকী বাড়ির অমতে গিয়ে বস্তিতে থাকা ছেলেটাকে বিয়েও করেন। তবে শঙ্করকে একা করে ২০২২ সালে ক্যানসারের কাছে হার মানেন গায়িকা সোনালী। চলে যান না ফেরার দেশে।