চাননি কোনও আয়োজন, কোনও পুষ্পবৃষ্টি বা গান স্যালুট- একদম নীরবে চলে গেলেন বাংলা থিয়েটারের ‘নাথবতী অনাথবৎ’ শাঁওলি মিত্র। ঠিক যেমনভাবে না ফেরার দেশে পারি দিয়েছিলেন তাঁর বাবা, শম্ভু মিত্র। ‘মরবার পরেও আমার দেহটা যেন তেমনি নীরবে, একটু ভদ্রতার সঙ্গে, সামান্য বেশে, বেশ একটু নির্লিপ্তির সঙ্গে পুড়ে যেতে পারে’, মৃত্যুর আগেই জানিয়েছিলেন শম্ভু মিত্র। সেইমতো ১৯৯৭ সালের ১৯শে মে মিডিয়ার ভিড়, ভক্তদের হাহাকার, সাদা ফুলের জমায়েত সবকিছু এড়িয়ে পঞ্চভূতে লীন হয়েছিলেন শম্ভু মিত্র। বাবার সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েছিলেন কন্যা শাঁওলি।
আড়াই দশক পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ২০২২ সালের ১৬ই জানুয়ারি সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শুধু চরিত্র বদল হল। এখানে শম্ভু মিত্রর জায়গায় তাঁর কন্যা শাঁওলি এবং শাঁওলি দেবীর জায়গায় তাঁর মানস কন্যা অর্পিতা ঘোষ। রবিবার দুপুরে নিঃশব্দে বিদায় নিলেন শাঁওলি মিত্র। একদম অনাড়ম্বর শেষ বিদায়ই ছিল তাঁর শেষ ইচ্ছা। নোটারি করে ইচ্ছাপত্রে সেকথা জানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মরদেহ নিয়ে অযথা হইচই চাননি তিনি, ঠিক যেমনভাবে কোনওরকম আসুরিক চিকিৎসা অস্বীকার করেছিলেন।
শাঁওলি মিত্রের মৃত্যুর পর তাঁর সেই ইচ্ছাপত্র প্রকাশ্যে এসেছে। যা রীতিমতো ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। মৃত্যুধ্বনি বোধহয় আগেই শুনতে পাচ্ছিলেন চুয়াত্তর বছর বয়সী এই নাট্য ব্যক্তিত্ব। তিনি লিখেছেন, ‘আমার একান্ত ইচ্ছে আমার পিতাকে অনুসরণ করেই। মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব আমার সৎকার সম্পন্ন করা হয়। ওই শরীরটিকে প্রদর্শন করায় আমার নিতান্ত সংকোচ। ফুলভারের কোনও প্রয়োজন নেই। সামান্য ভাবে সাধারণের অগোচরে যেন শেষকৃত্যটি সম্পন্ন হয়’।
প্রিয় পাঠক ও দর্শকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘যা পেয়েছি আমি তার যোগ্য কিনা জানি না। তবে তা পেয়েছি বলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বিবিধ কর্ম করবার প্রেরণা পেয়েছি। আমার অন্তরে সেই ভালোবাসা একান্ত আপন’।
দুপুর ৩টে ৪০ মিনিটে প্রয়াত হন শাঁওলি মিত্র। সেই খবর প্রকাশ্যে আসে গভীর রাতে। ঘনিষ্ঠমহলে অনেকেই অবাক এই খবরে। কারণ তাঁর অসুস্থতার খবর পর্যন্ত তেমনভাবে জানা যায়নি। এদেশে স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার নেই, তবে মৃত্যুর পরের শেষ যাত্রা কেমন হবে তা ঠিক করবার অধিকার প্রত্যেক ভারতীর আছে। পথ দেখিয়েছিলেন বাবা, সেই পথে হাঁটল মেয়ে। হয়ত পরপারে দেখা হবে দুজনের!