এক বছরের আগের ঠিক এমনই এক অভিশপ্ত রবিবারের দুপুরে সামনে এসেছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সংবাদ। যে খবর নাড়িয়ে দিয়েছে এদেশের, তথা পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সুশান্ত সিং রাজপুত ভক্তদের। দেখতে দেখতে একবছর অতিক্রান্ত… তবুও সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনা আজও রহস্যের বেড়াজালে আটকে।
আগামিকাল (সোমবার) সুশান্তের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। অভিনেতার প্রয়াণ দিবসের আগে তাঁর স্মৃতিচারণায় ডুব দিলেন নভ্য জিন্দাল। সুশান্তের খুব কাছের বন্ধুদের অন্যতম ছিলেন নভ্য, স্কুলজীবন থেকে শুরু এই বন্ধুত্বের। আজও বন্ধুর চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি তিনি, বিশ্বাস করতেও চান না এমন একটা সত্যি। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে নভ্য জানান, ‘আমি এখনও ভাবি এটা একটা দুঃস্বপ্ন… কেটে যাবে। গত দু-দশক ধরে, সুশান্ত আমার জীবনের এনার্জি আর খুশির ভান্ডার হয়ে থেকেছে। সুশান্ত যখন নামী তারকা হয়ে গেল, হয়ত আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগটা আর ছিল না, ও ব্যস্ত থাকত… রোজ কথা হত না। তবে আমরা দুজনেই জানতাম একে অপরের পাশে আমরা সবসময় আছি…’।
স্কুলজীবনের স্মৃতির কথা বলতে দিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন নভ্য। বলেন, ‘আমরা দুজনেই দিল্লিতে নতুন ছিলাম। কুলচা হংসরাজ মডেল স্কুলে ক্লাস ইলেভেনে ভর্তি হলাম। আমি উজ্জয়ন থেকে এসেছিলাম, আর সুশান্ত পাটনা থেকে। প্রথমদিন ক্লাসে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় আমি বলেছিলাম, আমি আগের স্কুলের বাস্কেট বল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম… সঙ্গে সঙ্গে সুশান্ত বলেছিল আমি তোর থেকে বাস্কেটবলটা শিখব… সেই বন্ধুত্বের শুরু’। নভ্য জানান, এরপর সেই বন্ধুত্বের ডোরটা দিনে দিনে মজবুত হয়েছে। মুখার্জি নগর কলোনিতে একাই থাকতেন সুশান্ত, তাই স্কুল শেষে বন্ধু নভ্যর বাড়িতেই চলে যেতেন, একসঙ্গে বসে আইআইটি আর জয়েন্ট এন্টার্স পরীক্ষার জন্য চলত পড়াশোনা। সকাল সাতটা থেকে রাত ৮-৯টা, দিনের বেশিরভাগ সময়টাই একসঙ্গে কাটাতেন সুশান্ত আর নভ্যা। ক্লাস টুয়েলভের রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর আরও একবছর দিল্লিতে থেকে জয়েন্ট এন্টার্সের জন্য তৈরি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুশান্ত, কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে দিল্লি ছাড়েন নভ্যা।
পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিয়ানর নভ্য আরও যোগ করেন, ‘সুশান্তের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব ছিল ও যেটা করবে ভাবত, সেটা করেই ছাড়ত। মেশিনের প্রতি ওর একটা অদ্ভূত টান ছিল, মনের মধ্যে হাজারো জিজ্ঞাসা.. সবকিছু বুঝতে হবে, জানতে হবে… মেশিনের প্রতি ভালোবাসা ছিল বলেই ও মেক্যানিলক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে দিল্লি কলেজ অফ ইঞ্জিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিল। ও শুধু ইঞ্জিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেছিল তেমন নয়, দুর্দান্ত ব়্যাঙ্কও করেছিল। আমি জানতাম, বিজ্ঞানকে ও কতটা ভালোবাসত, তারপর আচমকাই অভিনয়ের জন্য সব ছেড়ে দিল। আমি ভেবেছিলাম সেটা ওর জন্য সেরা সিদ্ধান্ত ছিল না। এরপর যখন ও কমনওয়েলথ গেমসে শামাক দাভারের গ্রুপে পারফর্ম করল, সেটা ওর জন্য একটা নতুন দরজা খুলে দিল। ও স্কুল-কলেজেও নাটকে অংশ নিত, তবে ওইদিনের পর অভিনয়ের জন্য ওর জেদ চেপে গিয়েছিল’।
সুশান্তের সঙ্গে শেষবার কবে কথা হয়েছিল নভ্যর? প্রয়াত অভিনেতার স্কুলজীবনের এই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু জানান, ‘গত বছর ওর জন্মদিনে শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল। ওকে তো বেশ চনমনে লেগেছিল, অন্যবারের মতোই প্রাণবন্ত। আমার একটাই ভুল হয়েছিল, আমি ভেবেছিলাম সুশান্ত ব্যস্ত, নিজের দুনিয়ায় ও খুশি আছে ওকে ডিসর্টাব করাটা ঠিক নয়। এখন ভাবি যদি ওর সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগটা রাখতাম….হয়ত পারতাম ওকে সাহায্য করতে। আমার জীবনে ওর যে জায়গা সেটা অপরিবর্তিত আছে, থাকবে… সেটা আমি কোনওদিন কাউকে দিতে পারব না’।