নাম আরাত্রিকা মাইতি। তবে টেলিপাড়ার দর্শক তাঁকে কখনও ‘খেলনা বাড়ি’র 'মিতুল', কখনও বা 'মিঠিঝোরা'র 'রাই', এই নামেই চেনেন। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না, এই আরাত্রিকা বাস্তবে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বাস্তবে ঝাড়গ্রামের মেয়ে।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। অনেক অল্প বয়সেই কাজ শুরু করেছিলেন আরাত্রিকা। তবে কীভাবে জেলা শহর ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা পাড়ি দিয়ে বাঙালির ড্রয়িং রুমে জায়গা করে নিয়েছেন? সেবিষয়েই ABP আনন্দের কাছে মুখ খুলেছেন আরাত্রিকা।
আরাত্রিকার কথায়, তিনি ছোট থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। অভিনয় জগতে পা রাখার আগে পর্যন্ত ঝাড়গ্রামেই থাকতেন আরাত্রিকা। অভিনেত্রী জানান, তাঁর প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন, সঙ্গে দাদু গৌরাঙ্গ প্রসাদ মাইতি থিয়েটার করতেন। তাঁর নিজেরও একটা নাটকের দল ছিল, নাম 'নবোদয় সঙ্ঘ'। তাঁর বাবা, জ্যেঠুও সেখানে ক্লাস করতেন। আরাত্রিকার কথায়, ‘আমি যে আলাদা করে কোনও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তা নয়, তবে ঝাড়গ্রামের স্কুলের অনুষ্ঠানে নাটক করতাম, নাচ করতাম। পাড়ার অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। নাটক ও নাচ, দুটোই আমি ছোট থেকে করি। সেভাবেই এগিয়ে যাওয়া। তারপর বাকিটা পুরোটাই মায়ের চেষ্টা বলা যেতে পারে।’
আরাত্রিকা জানান, তাঁর মা কাজের সূত্রে বছর তিনেক কলকাতায় ছিলেন। তাঁর মা-ই অডিশনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতেন। মায়ের হাত ধরেই বিভিন্ন জায়গায় ছবি জমা দিতে শুরু করেন আরাত্রিকা। অডিশনের জায়গা খুঁজে অডিশন দেওয়া এসব করতেন। তখন অবশ্য আরাত্রিকা অনেকটাই ছোট পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন। 'রাণী রাসমণি' ধারাবাহিকে যখন কাজ করেছিলেন, তখন তিনি অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। তিনদিনের ছোট্ট কাজ ছিল সেটা। এরপর শেষপর্যন্ত ২০২১-এ দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ‘অগ্নিশিখা’ ধারাবাহিকে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পান।
‘অগ্নিশিখা’র পর আরাত্রিকা ফের 'খেলানা বাড়ি' ধারাবাহিকে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন। বছর দেড়ের চলার পর শেষ হয় সেই ধারাবাহিক। এরপর মাত্র ২দিন পরেই কাজ শুরু করেছিলেন ‘মিঠিঝোরা’তে, সেখানেও তিনি মুখ্য চরিত্র। ফলে এখনও পর্যন্ত সেভাবে বসে থাকতে হয়নি আরাত্রিকাকে। তবে তিনি জানান, ‘আমি প্রচুর অডিশন দিয়েছি, বাদও পড়েছি। পার্শ্বচরিত্র থেকেই বাদ পড়েছি কত। কোনও জায়গায় বলেছে একটু স্বাস্থ্যবান অভিনেত্রী চাই। কেউ বলেছেন বড় বাচ্চা বাচ্চা দেখতে। আবার কখনও অডিশন দেওয়ার আগেই বাদ পড়েছি। চেনা মুখ না হলে যা হয় আর কী’।
আরাত্রিকা জানান, বড়পর্দাতেও কাজের সুযোগ এসেছিল। তবে যেহেতু সিরিয়ালে কাজের জন্য চুক্তি থাকে তাই তিনি করতে পারেননি। তবে আরাত্রিকার আশা, আবারও সুযোগ আসবে, তখন অবশ্যই বড়পর্দাতেও কাজ করবেন।
প্রসঙ্গেত, আরাত্রিকা এই মুহূর্তে যোগমায়া দেবী কলেজের সাইকোলজি অনার্সের ছাত্রী। একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে শ্যুটিং। কীভাবে সামলাচ্ছেন। আরাত্রিকার কথায়, ‘ভীষণই কঠিন। প্রথমে মনে হয়েছিল অসুবিধা হবে না করে নেব। তবে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে ফেরার পর আর এনার্জি থাকে না। তাই ছুটির দিনেই পড়াশোনা করি। তবে বেশিরভাগ সময়ই শুনে মনে রাখি, রেকর্ডিং শুনি। বাবা পড়ে শোনান, সেটা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। এছাড়া স্টুডিওতে বই নিয়ে যাই ফাঁকা সময় পড়ি।’