মমতা শঙ্কর অর্থাৎ যাকে অনেকেই ভালোবেসে মম আন্টি বা মমদি বলে ডাকেন তিনি বিগত কয়েকদিন ধরে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। কারণ? এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আধুনিক মহিলাদের নিয়ে তিনি এমন কিছু বেফাঁস কথা বলেছেন যা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যদি মেনে নেওয়া হয়, বা ইগনোর করে যাওয়া হয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম আমাদের উপর যে হাসবে, এই কথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক তিনি এই মন্তব্য করার পর সেটার নানা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাতে কি সত্য বদলায়?
কী বলেছেন মমতা শঙ্কর?
আনন্দবাজারকে দেওয়া ইন্টারভিউতে মমতা শঙ্কর বলছেন, 'আমি শাড়ি পরব কিন্তু আঁচলটা জায়গা মতো থাকবে না, এটা ভাবনাটা বুঝতে পারি না। ক্ষমা করবেন, এটা বলছি বলে যাঁদের আমরা রাস্তার মেয়ে বলতাম, যাঁরা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে এমন মেয়ে বলতাম, তাঁরা এইরকম ভাবে দাঁড়াত। কিংবা গ্রামে কাজ করতে গিয়ে আঁচল সরে গেল সেটা দোষের ছিল না। এঁরা মানুষকে অ্য়াট্রাক্ট করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন, এটা তাঁদের পেশা, আমি তাঁদেরও শ্রদ্ধা করছি।'
মমতার বেফাঁস মন্তব্যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুপ্রভাব
মমতা শঙ্কর এদিন যা বলেছেন সেটা রীতিমত নারীবিদ্বেষী এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রভাব, থুড়ি কুপ্রভাব যে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি যা দেখে চমকাচ্ছি সেটা হল বহু মানুষ তাঁর কথায় সমর্থন করছেন, যাঁদের অধিকাংশ আবার মহিলা। আর এই জিনিসটা যে সমাজের কেবল বাস্তবের কঠিন, ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে সেটা নয়। একই সঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
যাঁরা মমতা শঙ্করের এই বক্তব্যকে সমর্থন করছেন তাঁদের কাছে কিছু প্রশ্ন রইল, - প্রথমত, যাঁরা মনে করেন মেয়েদের ধর্ষিতা হওয়ার নেপথ্যে তাঁদের পোশাক দায়ী তাহলে সেটা ঠিক? আপনারা সেই কথাকে সমর্থন করছেন তাই তো? দ্বিতীয়ত, কারও শাড়ি পরার ধরনে তাঁর বক্ষিভাজিকা দেখা যাচ্ছে মানেই সে পুরুষদের ইঙ্গিত দিচ্ছে, আপনি নিশ্চিত? সর্বোপরি ধরুন যাঁরা নাচ করেন তাঁরা যখন সাধারণ ভাবে শাড়ি পরে নাচেন তখন শাড়ির আঁচল সরে শরীরের কিছু অংশ দেখা গেলে তিনি খারাপ মেয়ে হয়ে যান? বা আজকাল অনেকেই থাই দেখানো শর্ট ড্রেস পরেন , হট প্যান্ট পরেন, তার মনে তাঁরা সকলেই খারাপ? কারণ আপনাদের যুক্তি অন্তত সেটাই বলছে! মেয়েদের বুকেই তো আর সব সম্মান থাকে না, থাই, পেট, ইত্যাদি প্রভৃতি সব জায়গাতেই থাকে। তাহলে এখন উপায়? সকলেই বোরখা পরে বেরোবেন? তাতে কেউ মেয়েদের দিকে খারাপ নজরে তাকাবেন না, নিশ্চিত তো? মানে ১০০ শতাংশ গ্যারেন্টি দিচ্ছেন?
একজন মেয়ে কীভাবে পোশাক পরবে সেটা যা খুশি হতে পারে সেটা ঠিক করে দেওয়ার কে হই আমরা? এমনকি পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সমাজ কি এসব বলে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না? স্লাট শেম করছে না? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
কারও কিছু অশোভন লাগতেই পারে। সেটা হলে দেখো না সেই জিনিস, ইগনোর করো। আনফ্রেন্ড করো। হাজারো অপশন আছে এখন। কিন্তু কেউ রিভিলিং পোশাক পরছে মানেই সে আকর্ষণ করতে চাইছে সেটা নাও হতে পারে।
মমতা শঙ্কর যা বলেছেন সেটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুপ্রভাব। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এখন এই জিনিসের নিন্দা না করলে ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কোন সমাজ রেখে বা তৈরি করে যাচ্ছি সেটা ভাবতে হবে। বুক খোলা পোশাক পরলে যেমন (পুরুষের) সম্মান পাওয়া যায় না (অভিনেত্রীর মতে), নারীবিদ্বেষী কথা বললেও কিন্তু (পুরুষের) সম্মান জোটে না।