কোভিড-১৯-এর সময় দেশজোড়া লকডাউনের কারণে কলকাতা দূষণহীন পরিস্কার বায়ুর সাক্ষাৎ পেয়েছিল। এখন সে সব অতীত। মাঝে মাঝেই দূষণের কারণে সারা দেশে তালিকার উপরের দিকে উঠে আসে কলকাতার নাম। সাম্প্রতিককালে এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, দূষণের ফলে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়া বায়ুদূষণ মানুষের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকারক।
বায়ুদূষণ শরীরের সমস্ত অঙ্গেই কিছু না কিছু কুপ্রভাব ফেলে। নাক ও মুখের মাধ্যমে দূষিত বায়ু সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছায়। এর ফলে দেখা দেয় শ্বাসকষ্টজনিত নানারকম সমস্যা। কিছু সমস্যা দীর্ঘকালীন রোগেও পরিনত হয়।
দীর্ঘসময় ধরে দূষণের মধ্যে থাকলে বৃক্কের রক্তনালী ক্ষয়ে যেতে পারে। এতে বৃক্কের কার্যপ্রণালীও ব্যাহত হয়।
নাইট্রোজেন অক্সাইড একটি অন্যতম প্রধান বায়ুদূষক। এই রাসায়নিক রক্তনালীর স্বাভাবিক কার্যপ্রণালী ব্যাহত করে। পাশাপাশি শিরা ও ধমনীর মধ্যে ক্যালসিয়াম জমতে সাহায্য করে। এর ফলে শিরা ও ধমনীর মধ্যে ব্লকেজ সৃষ্টি হয়। এর থেকে যেকোনও সময় হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি বায়ুদূষণের ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট হয়। এছাড়া দেখা দিতে নানারকম মানসিক সমস্যা।
বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে, অবসাদ ও অ্যাংজাইটির পিছনে বায়ুদূষণ অন্যতম প্রধান কারণ। দূষিত বায়ু নিয়মিত নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে গেলে শিশুদের কগনিটিভ কার্যক্ষমতা সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না। পাশাপাশি বড়দের কগনিটিভ কার্যক্ষমতা নানাভাবে ব্যাহত হয়। দূষিত বায়ু মানুষের মস্তিষ্কের নানা কোশের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত করে। এছাড়া শরীরের কিছু স্বাভাবিক জেনেটিক ও জৈব উপাদানের উপরেও কুপ্রভাব ফেলে। এতে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা ফুটে ওঠার আশঙ্কা থেকে যায়।
২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা দূষিত বায়ুর মধ্যে বেশি সময় কাটান, তাদের মধ্যে নানারকম মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অবসাদ ও অ্যাংজাইটি প্রাথমিক দুটি সমস্যা। এছাড়াও সেই সমীক্ষায়, ক্রিৎজোফেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার ও পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যার উদাহরণও পাওয়া গিয়েছে।
অত্যাধিক বায়ুদূষণের ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রও ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়। স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুর কাজ ব্যাহত হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্নায়ুর মৃত্যুও হতে পারে।