কোনও কিছু যাচাই না করেই স্থূল ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা করেনি আমরা। প্রত্যেকের বিশ্বাস করতে শুরু করি যে, ভুল খাদ্যাভ্যাস, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের জন্য তাঁরা স্থূলতার শিকার। আবার বাচ্চাদের মধ্যে স্থূলতার বিষয়টি আমরা সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করে যাই। কারণ আমরা মনে করতে থাকি যে, তাঁরা বড় হলে এই সমস্ত মেদ কমে যাবে।
তবে আসল ঘটনা হল নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন বা ভুল খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও বিভিন্ন কারণ আছে, যা স্থূলতার জন্য দায়ী। জিনগত কারণ, হাইপোথায়রয়েডিসম, ইনসুলিন রেসিসটেন্স ও পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা কিছু কিছু ওষুধও স্থূলতার জন্য দায়ী। ফিজিওথেরাপিস্ট ড: রাম্যা নায়ার স্থূলতার সঙ্গে জড়িত ৫টি মিথ সম্পর্কে জানিয়েছেন।
স্থূলতা কী?
এ ক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে শুরু করে, যার ফলে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। কোনও ব্যক্তির বডি মাস ইন্ডেক্স ২৫ বা তার বেশি হলে, সেই ব্যক্তি স্থূল হিসেবে বিবেচিত হন। এই অতিরিক্ত মেদের কারণে হৃদযন্ত্রে সমস্যা, ডায়বিটিস, আর্থ্রাইটিস, প্রজননে সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়। এটি আবার নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের ক্যান্সারের কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
স্থূলতা সঙ্গে জড়িত মিথ
প্রথম মিথ- নিষ্ক্রিয় জীবন যাপন প্রণালী স্থূলতার কারণ
সত্যতা- কোনও স্থূল ব্যক্তিকে দেখলে সবার আগে এই কথাই মাথায় আসে যে তাদের জীবনযাপন প্রণালীতে গলদ রয়েছে। চিকিৎসক নায়ার জানিয়েছেন, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও ভুল খাদ্যাভ্যাসকে স্থূলতার জন্য দায়ী করেন। প্রায়ই শোনা যায় যে স্থূল ব্যক্তিরা অলস ও তাদের মধ্যে অনুপ্রেরণার অভাব রয়েছে। খাবার-দাবার ও ব্যায়ামের অভাব এই শারীরিক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হলেও, এ ছাড়াও আরও অনেক কারণ বর্তমান।
দ্বিতীয় মিথ- স্থূল ব্যক্তির মেটাবলিজম ধীরগতির
সত্যতা- তিনি আরও জানিয়েছেন যে, সকলে একপ্রকার জেদবশতই এটা মনে করেন যে, রোগা ব্যক্তির মেটাবলিজম দ্রুতগতি সম্পন্ন। বড় শরীরের রেস্টিং মেটাবলিক রেট বেশি, কারণ সাধারণ ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। মেটাবলিজম কতটা দ্রুতগতি সম্পন্ন, তা নির্ভর করে শরীরের গঠনের ওপর, ওজনের ওপর নয়। মেদের তুলনায় পেশীর কলাগুলি অধিক ক্যালরি পোড়ায়।
তৃতীয় মিথ- শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ওবেসিটি একটি সমস্যা
সত্যতা- অল্প বয়সি বাচ্চারা দ্রুত বেড়ে ওঠে। এ কারণে অনেকে মনে করেন, যে সমস্ত বাচ্চাদের অতিরিক্ত ফ্যাট রয়েছে, তারা বড় হলে তা কমে যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কোনও বাধ্যকতা নেই যে বাচ্চাদের স্থূলতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূর হয়ে যাবে।
চতুর্থ মিথ- পরিবারের সকলে স্থূল, তাই আমিও স্থূলই হবে
সত্যতা- এটি সকলের বদ্ধ ধারণা। স্থূলতার পিছনে পারিবারিক ইতিহাস বা জিন অন্যতম কারণ ঠিকই। কিন্তু এই প্রবণতা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বলে যে কোনও ব্যক্তি স্থূল হবে, তা মনে করার কোনও কারণ নেই। নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা জীবনযাপন প্রণালীতে সামান্য পরিবর্তন করে ওজন কম করতে পারেন, পাশাপাশি স্থূলতার ঝুঁকিও কমবে।
পঞ্চম মিথ- শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব ও অস্বাস্থ্যকর খাবার-দাবার স্থূলতার জন্য দায়ী
সত্যতা- শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাবে আমরা যত ক্যালরি ঝরাই তার চেয়ে বেশি ওজন বৃদ্ধি জনিত কারণে স্থূলতার ক্ষেত্রে গ্রহণ করে থাকি। তবে সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে স্থূলতার মূল কারণ আরও বেশি জটিল।