আজ ২৬ জানুয়ারি। সমগ্র ভারত জুড়ে প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হচ্ছে। তবে ইতিহাসের পাতায় এই তারিখের অন্য ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। ১৯৪৫ সালের এই দিনে সোভিয়েত সেনা পোল্যান্ডের কুখ্যাত আউশভিৎস যুদ্ধবন্দিশিবির দখল করেছিল এবং সারা পৃথিবী জানতে পেরেছিল হিটলারের নাৎসি সামরিক বাহিনী পরিচালিত ইহুদি গণহত্যার ভয়ংকর ইতিহাস। আউশভিৎস যুদ্ধবন্দিশিবির তিনটি ইউনিটে ভাগ করা ছিল। এছাড়াও সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টি স্যাটেলাইট শিবির বানানো হয়েছিল এই ভয়ঙ্কর হত্যালীলায়। এই আউশভিৎস যুদ্ধবন্দিশিবির যুদ্ধ পূর্ববর্তী জার্মানি-পোল্যান্ড সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত ক্রাকো থেকে প্রায় ৩৭ মাইল দূরে অবস্থিত ছিল।
১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুতে যখন সোভিয়েত লাল সেনা পোল্যান্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তখনই প্রমাদ গুনেছিল নাৎসি বাহিনী। ওয়ার’শ এবং ক্রাকো দখল করার পর সোভিয়েত বাহিনী আউশভিৎসের দিকে রওনা দেয়। এই অবস্থায় জার্মান গেস্টাপো নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে আউশভিৎস যুদ্ধবন্দিশিবিরে। সোভিয়েত সেনা যখন শেষমেশ ঢুকতে পেরেছিল সেখানে, তারা ৬৪৮ টি মৃতদেহ এবং তার সঙ্গে ৭০০০ অভুক্ত, আধমরা মানুষের খোঁজ পেয়েছিল। এছাড়া তারা ছয়টি গুদামের খোঁজ পেয়েছিল যেখানে হাজার হাজার নারী পুরুষের পোশাক ও জুতো পাওয়া গিয়েছিল, যেগুলো জার্মান নাৎসি সামরিক বাহিনী পুড়িয়ে দিতে পারেনি সময়ের অভাবে।
তবে একথা ভাবলে চলবে না যে সংখ্যা এত কম ছিল! সোভিয়েত সেনা আসার খবর পাওয়া মাত্রই নাৎসি সামরিক বাহিনী আউশভিৎস যুদ্ধবন্দিশিবির ফাঁকা করতে শুরু করেছিল। প্রায় ৬০,০০০ বন্দিকে এই শিবির থেকে বলপূর্বক ওডজিসল শহরের দিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যাঁরা পিছিয়ে পড়ছিলেন বা হাঁটতে পারেননি, তাঁদের গুলি করে মেরে ফেলেছিল নির্মম নাৎসি বাহিনী। একদিকে প্রতিকূল আবহাওয়া, তার উপর অভুক্ত অবস্থায় মাইলের পর মাইল হাঁটা আর বন্দুক তাক করে থাকা নাৎসি বাহিনী— প্রায় ১৫,০০০ মানুষ এই যাত্রাপথেই প্রাণ হারিয়ে ছিলেন।
আজকের আধুনিক জার্মানি সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিভিন্ন সামাজিক মাপকাঠিতে। হিটলার ও নাৎসি সামরিক বাহিনী এবং তাদের ঐতিহাসিক ইহুদি বিদ্বেষ আজ অতীত। কিন্তু যেই ভয়ানক রক্তলীলা তারা চালিয়েছিল নিরীহ মানুষের উপর, কোনও নিন্দা যথেষ্ট নয়। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ ইহুদিকে বন্দি করে আনা হয়েছিল আউশভিৎস যুদ্ধবন্দিশিবিরে। এর মধ্যে নাৎসি হত্যালীলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন কম করে ১১ লক্ষ মানুষ। তবে অন্যান্য বন্দিশিবিরের সংখ্যা যদি যোগ করা যায়, তাহলে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ৯০ লক্ষ থেকে এক কোটি দশ লক্ষের মতো। তবে এই তালিকায় শুধুমাত্র ইহুদিরা ছিলেন এমন নয়, হিটলারের নাৎসি বাহিনীর শিকার হয়েছিলেন সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, সাম্যবাদী, রোমানী ভাষাগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষও।