প্রতি বছর এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ পালিত হয় ন্যাশনাল সেফ মাদারহুড ডে বা জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এই মাতৃত্বের স্বাদ পেতে প্রতিটি মহিলাকে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিতে হয়। এর অন্যতম বড় কারণ হল গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি ও যত্নের অভাব। পাশাপাশি সচেতনতাহীনতার কারণে আজও সন্তান প্রসবের সময় অধিকাংশ মহিলার মৃত্যু হয়, বিশেষত ছোটa শহর ও গ্রামে। তাই গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের সচেতন করতে প্রতি বছর আজকের দিনে পালিত হয় ন্যাশনাল সেফ মাদারহুড ডে।
অধিকাংশ মহিলাই প্রেগনেন্সিতে সঠিক আহার ও নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেন না। নিজের শারীরিক কষ্টকে লুকিয়ে রাখেন তাঁরা। যার ফলে সন্তান প্রসবের সময় নানা জটিলতা দেখা দেয়। অথচ গর্ভধারণকালে সাধারণ সময়ের চেয়েও অধিক যত্ন নেওয়া জরুরি। ছোটো একটি গাফিলতি এবং তারপর অনুতাপ করা ছাড়া কোনও পথ খোলা থাকবে না। এই দিবস উপলক্ষে এমন কয়েকটি সাধারণ বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন, যা মেনে চললেই স্বাস্থ্যকর প্রেগনেন্সির স্বপ্নপূরণ করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মত, স্বাস্থ্যকর শিশু ও প্রসবের জন্য এই বিষয়গুলির ওপর নজর দেওয়া জরুরি।
১. অবসাদ থেকে শত হাত দূরে থাকুন
একাধিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, গর্ভবতী মহিলাদের মানসিক অবসাদ, তাঁদের ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। গর্ভধারণকালে হবু মা যদি অধিক অবসাদ নিয়ে থাকে, তা হলে বাচ্চার মধ্যে বড় হওয়ার পর বেশি খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, এই অবসাদ প্রসবকালীন সময়কে করে তোলে কষ্টকর ও সমস্যাসঙ্কুল।
২. হবু মায়ের জন্য রোদ জরুরি
প্রেগনেন্ট মহিলা শরীরে রোদ লাগাও অত্যন্ত জরুরি। তবে বেলার দিকের রোদে না গিয়ে সকালের রোদ উপভোগ করুন। রোদের মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই স্বাস্থ্যকর প্রেগনেন্সির জন্য রোদ অত্যন্ত জরুরি। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গর্ভাবস্থার সময় ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে প্রতিদিন সকালে আধ ঘণ্টা রোদে বসুন। এর ফলে শিশুর হাড় মজবুত হবে।
৩. সুষম আহার
গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ ও সুষম আহার গ্রহণ করলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি লাভ করতে পারে। আবার হবু মায়ের ডায়েট গর্ভস্থ ভ্রুণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। গর্ভবতী মহিলার খাদ্যাভ্যাস সন্তানের শারীরিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। ফল, সবজি, ডাল, অন্ন, দুধ, দই, মাংস-মাছ, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত উপাদান নিজের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এ ছাড়াও সবুজ শাকসবজি, মরশুমি ফল বেশি করে খাওয়া উচিত। গরমকালে বাইরের খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।
৪. যোগাভ্যাস ভুলবেন না
অনেক গর্ভবতী মহিলার ধারণা, গর্ভাবস্থায় যোগাসন বা এক্সারসাইজ করলে জটিলতা বা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই ধারণা ভুল। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী প্রেগনেন্সিতে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রশিক্ষকের তত্বাবধানে ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম ও কিছু যোগাসন করলে বাচ্চার স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখলে সন্তান প্রসব সহজ হবে ও প্রসবকালীন যন্ত্রণাও কমবে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি
প্রেগনেন্সিতে মহিলার বডি মাস ইন্ডেক্স বা বিএমআই শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সমীক্ষায় গর্ভাবস্থার আগে মায়ের বিএমআই ও শিশুর বিপাক প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক লক্ষ্য করেন। সমীক্ষকদের মতে, মায়ের স্থূলতা শিশুর বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। তাঁদের মতে, গর্ভাবস্থার সময় বাচ্চাদের যে সমস্ত রোগ হয়ে থাকে, যেমন- সেরিব্রাল পালসি, মির্গী ও অন্যান্য জন্ম দোষ এবং গর্ভবতী মহিলার স্থূলতার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে গর্ভবতী মায়েদের নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয় সচেতন থাকতে হবে।
৬. কফি পান কমিয়ে দিন
গর্ভবতী মহিলাদের চা ও কফি পানও কমিয়ে দেওয়া উচিত। কফিতে উপস্থিত ক্যাফেন ভ্রুণের জন্য ভালো নয়। অন্য দিকে স্তন্যপান করিয়ে থাকা মহিলাদেরও কফি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এর ফলে বাচ্চারা ব্যাকুল ও খিটখিটে হয়ে পড়ে।
৭. ধূমপান-মদ্যপান! নৈব নৈব চ
গর্ভাবস্থায় ধূমপান ও মদ্যপান পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ধূমপানের ফলে রক্তবাহিকাগুলি শক্ত হয়ে যায়। গর্ভস্থ ভ্রুণ যাতে জরুরি পুষ্টিকর উপাদান গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য প্লাসেন্টা রক্তবাহিকায় ভরে থাকে। কিন্তু ধূমরান ও মদ্যপানের কারণে রক্ত বাহিকা সংকুচিত হয়ে পড়ে ও শিশু উপযুক্ত পুষ্টি লাভ করতে পারে না।