লিবিয়ার রাজনৈতিক ডামাডোল শেষ হয়েও যেন শেষ হওয়ার নয়। লিবিয়ার পূর্ব-ঘেষা পার্লামেন্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছে ফাথি বাসাঘাকে। কিন্তু লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানতে রাজি নয় এই একতরফা ঘোষণা। আব্দুল হামিদ দেবেইবা, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি ইস্তফা বা পিছু হটতে রাজি নন। বরং হাবেভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন হলে তবেই তিনি ক্ষমতা থেকে সরে যাবেন।
তবে সমস্যা এখানেই শেষ নয়। বাধ সেধেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ! তারা জানিয়েছে, আগের প্রধানমন্ত্রী তথা আব্দুল হামিদ দেবেইবাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এই প্রসঙ্গে না বললেই নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জ দীর্ঘ দিন ধরেই দুই ভাগে বিভক্ত দেশকে একজোট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সমগ্র লিবিয়ায় দু’টি আলাদা প্রশাসন ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছে। বর্তমান সমস্যা সেই দিকটিকে ইঙ্গিত করে। তবে লিবিয়ায় অশান্তির পরিবেশ আজকের তৈরি নয়। এর আগে ন্যাটোর মদতপুষ্ট ক্ষমতার দ্বারা ২০১১ সালে সিংহাসনচ্যুত হয়েছিলেন একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। লিবিয়া পূর্ব এবং পশ্চিমে দুই আলাদা আলাদা প্রশাসনিক ক্ষমতার অধীনে রয়েছে।
কয়েক দিন আগে যখন লিবিয়া পার্লামেন্টে ভোট হওয়ার কথা ছিল, তখন পার্লামেন্টের স্পিকার আগুইলা সালে জানান, ফাথি বাসাঘা প্রধানমন্ত্রী পদের একমাত্র দাবিদার কারণ আরেক প্রার্থী খালিদ আল-বাইবাস ভোট প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। গত বছরের শেষে ২৪শে ডিসেম্বর লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোট অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যায় কারণ যুযুধান দুই পক্ষ কোনভাবেই এক মত হতে পারেনি। পূর্ব-ঘেষা পার্লামেন্টের অনেকেরই দাবি যে সেই সময় থেকেই আব্দুল হামিদ দেবেইবার নৈতিক ক্ষমতা হারিয়েছে শাসনে থাকার। তবে দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই তিতিবিরক্ত। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন পার্লামেন্টের নতুন প্রধান মন্ত্রীর সিদ্ধান্তে। গত দুই বছর লিবিয়া তুলনামূলক ভাবে শান্ত ছিল।
আব্দুল হামিদ দেবেইবা মিশ্রত অঞ্চলের একজন ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী যিনি গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমী শক্তি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের রাজনৈতিক দৌত্যের মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।দেবেইবা সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে ঐক্যমত্য করে দ্রুত সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু দেবেইবা নিজেও দোষী অনেকটাই। অন্তর্বর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হবার সময়ে বলেছিলেন যে কোন ভাবেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। কিন্তু নিজে ক্ষমতার লোভের বশবর্তী হয়ে কথার খেলাপ করেন। তবে পশ্চিমী দেশগুলো ভোট পর্যন্ত এই দেবেইবা সরকার নিয়ে এগিয়ে চলার পক্ষপাতী। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্যরা বিলম্ব না করে নতুন সংবিধানের দাবি তুলেছেন।
আর যাই হোক, তাই এই মুহূর্তে কোন রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা বিশ বাও জলে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে!