ইসলাম ধর্মে যে কোনও ধরনের নেশাকেই ‘হারাম’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর শরিয়াহ আইন অনুযায়ী মদ্যপান পাপ। যে কারণে সৌদি আরবে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। সেই রক্ষণশীলতার পর্দা খানিক হলেও সরছে। শিগগিরই রাজধানী রিয়াদে বিভিন্ন দেশের অ-মুসলিম কূটনীতিবিদদের জন্য চালু হচ্ছে মদের দোকান। শর্ত একটাই, মদের দোকান থেকে মদ কিনতে পারবেন শুধু মাত্র অ-মুসলমান কূটনীতিকরাই। বুধবার এই সংক্রান্ত একটি বিবৃতি পেশ করা হয়েছে।
সৌদি আরবের সরকার ঘোষণা করেছে, রাজধানী রিয়াদে অ-মুসলমান কূটনীতিকদের জন্য একটি মদের দোকান খোলা হবে। এই দোকানে মদ কেনার জন্য কূটনীতিকদের প্রথমে সরকার প্রদত্ত একটি মোবাইল অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। এরপর তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে একটি ক্লিয়ারেন্স কোড পাওয়া যাবে। সেই কোড পেলে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ কিনতে পারবেন।
জানা গেছে, রিয়াধের সেই অঞ্চলে মদের দোকানটি খোলা হবে যেখানে কূটনীতিকদের আনাগোনা বেশি। সেখানে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস রয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দোকানটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিবিসির একটি রিপোর্টে বলা হয়, রাজধানীর রিয়াদের কেন্দ্রস্থলের কাছে কূটনীতিক পাড়ায় হবে এই অ্যালকোহল শপ। সেজন্য আইন সংশোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি সরকার। বাদশাহ আবদুল আজিজের ছেলে মিশারি বিন আবদুলআজিজ আল-সৌদ গুলি করে এক ব্রিটিশ কূটনীতিককে মেরে ফেলার পর ১৯৫২ সালে আইন করে অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ করে সৌদি আরব। সে কারণে বিদেশি কূটনীতিকদের গলা ভেজানোর জন্য এতদিন বিশেষ কূটনৈতিক সুবিধার সুযোগ নিতে হত।
আশ্চর্যের বিষয়, একটি দেশ অন্য দেশে তার দূতাবাসে গোপনীয় নথি থেকে শুরু করে জরুরি সামগ্রী পাঠানোর জন্য ব্যবহার করে বিশেষভাবে সিল করা প্যাকেজ, যাকে বলে ‘ডিপ্লোম্যাটিক পাউচ’। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, বিমানবন্দর বা কোনও জায়গায় রাষ্ট্রীয় সিলমোহরযুক্ত এসব প্যাকেজ খোলা বা পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। সৌদি আরবে অ্যালকোহল আমদানি নিষিদ্ধ হলেও ওই ‘ডিপ্লোম্যাটিক পাউচে’ করে এতদিন ঠিকই মদ ঢুকত বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য। সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, মদের অবৈধ কারবার বন্ধের জন্যই রিয়াদে এত বছর পর অ্যালকোহল বিক্রির দোকান খোলা হচ্ছে।
পাশাপাশি, ২১ বছরের কম বয়সী কেউ ওই দোকানে ঢোকার সুযোগ পাবে না। ভেতরে মেনে চলতে হবে ‘পোশাক বিধি’। ড্রাইভার বা অন্য কাউকে পাঠিয়ে সেখান থেকে মদ কেনা যাবে না। অর্থাৎ, যার নামে নিবন্ধন, তাকেই সশরীরে যেতে হবে। একজন কতটুকু মদ কিনতে পারবেন, তার মাসিক কোটাও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। একজন ক্রেতার জন্য মাসে বরাদ্দ থাকবে সব মিলিয়ে ২৪০ পয়েন্ট। প্রতি লিটার বিয়ারে এক পয়েন্ট, প্রতি লিটার ওয়াইনে তিন পয়েন্ট এবং প্রতি লিটার লিকারে ছয় পয়েন্ট কাটা হবে। সব নিয়ম মেনে সুরা পানের সুযোগ পেলেও এটা মাথায় রাখতে হবে যে, জায়গাটা সৌদি আরব এবং মদপানের পর আচার আচরণে কোনো বেচাল হওয়া চলবে না।
সৌদি আরবের বর্তমান আইনে মদ পান করলে কিংবা নিজের কাছে রাখলে শাস্তি হিসেবে জেল-জরিমানা থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে দোররা মারা এমনকি নিজের দেশে ফেরত পাঠানোও হতে পারে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ এর আওতায় সৌদি আরবকে বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই কূটনীতিকদের জন্য পানশালা খোলার এই উদ্যোগ।
বলাবাহুল্য, সৌদি আরবের মতো অতিরিক্ত রক্ষণশীল, মুসলমান অধ্যুষিত দেশে মদ খাওয়া অপরাধ। মদ্যপান রুখতে কঠোর আইন রয়েছে। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী কেউ মদ্যপান করলে তাঁকে কঠোর সাজা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। লুকিয়ে মদ্যপান করেছেন যাঁরা, এমন মানুষদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথাও শোনা যায়। তা সত্ত্বেও বিদেশি অ-মুসলমান কূটনীতিকেরা গোপনে, কালোবাজার থেকে মদ কিনতেন। সেই দেশে এমন একটি পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। ব্যবসা এবং পর্যটনে জোয়ার আনতেই যুবরাজের এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অ-মুসলমান সাধারণ নাগরিকেরা ওই দোকান থেকে মদ কিনতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে খোলসা করে কিছু জানানো হয়নি।
নতুন নিয়মের বিস্তারিত
- মদ কেনার জন্য কূটনীতিকদের অবশ্যই একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং কর্মসংস্থান ভিসা থাকতে হবে।
- তাদের অবশ্যই সৌদি আরবের কূটনৈতিক মিশনে নিবন্ধিত হতে হবে।
- তারা অবশ্যই নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
- পররাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ক্লিয়ারেন্স কোড পাওয়ার পর তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ কিনতে পারবেন।
নতুন নিয়মের গুরুত্ব
এই নতুন নিয়মটি সৌদি আরবের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। কারণ, সৌদি আরব একটি অত্যন্ত রক্ষণশীল ইসলামী দেশ। সেখানে মদ্যপান নিষিদ্ধ। তবে, এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে সরকার অ-মুসলমান কূটনীতিকদের চাহিদা পূরণ করতে চাইছে।