অনেকদিন আগেই আফগানিস্তান গিয়েছে তালিবানের দখলে। তবে বিভিন্ন দেশে আফগান দূতাবাসে এখনও কাজ করে চলেছেন আগের গণতান্ত্রিত সরকার নিযুক্ত কর্তা ও আধিকারিকরা। ভারতেও এতদিন সেটাই হচ্ছিল। তবে আজ থেকে দিল্লিতে অবস্থিত আফগান দূতাবাসটি বন্ধ হয়ে গেল। দূতাবাসের কর্মীদের অভিযোগ, মোদী সরকারের থেকে সাহায্য না পাওয়ার জেরেই দূতাবাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে তারা। উল্লেখ্য, বিগত দু'দশক ধরে আফগানিস্তানে উন্নয়মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ভারত। সেই দেশে একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিল দিল্লি। আগের গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ভালো ছিল। তবে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রকল্পগুলি নিয়ে জল্পনা ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে দিল্লি পিছনের দরজা দিয়েই তালিবানের সঙ্গে আলোচনায় বসে শুরু করেছিল। আফগানদের জন্য সাহায্য পাঠানোও জারি রেখেছিল। এই পরিস্থিতিতে গত সরকারের নিযুক্ত আফগান কূটনীতিকরা দিল্লিতে অভিযোগ করলেন, ভারত সরকার তাদের যথেষ্ট সাহায্য করছে না। যার জেরে আজ, ১ অক্টোবর থেকে দিল্লির আফগান দূতাবাস বন্ধ করতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
তালিবানের সঙ্গে কথা বললেও এখনও পুরোপুরি তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি দিল্লি। এই আবহে আগের সরকারের নিযুক্ত আফগান কূটনীতিকদেরই দিল্লির দূতাবাস চালাতে দিচ্ছিল দিল্লি। তবে সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগে আফগানরা দূতাবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে এই মর্মে তারা মৌখিক বার্তাও পাঠিয়েছিল। গত ২৫ সেপ্টেম্বরে এক বিবৃতি জারি করে আফগান দূতাবাসের তরফে জানানো হয়, আফগান নাগরিকদের স্বার্থে কাজ করতে পারছে না এই দূতাবাস। কাবুলে 'বৈধ সরকর' না থাকার জেরে আরও সমস্যা হচ্ছে। এর আগে একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, দিল্লির আফগান দূতাবাসে কর্মরত বহু কূটনীতিক তৃতীয় কোনও দেশে চলে যাচ্ছেন। এদিকে যে সব কূটনীতিকরা আছেন, তাদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। এদিকে আগের আশরাফ ঘানি সরকারের নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত মোসা নাইমির ভিসা মে মাস থেকে রিনিউ করেনি ভারত সরকার। এই আবহে অবৈধ ভাবেই ভারতে আছেন তিনি। আর তাই শীঘ্রই তিনি দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা কছেন।
এদিকে দিল্লিতে আফগান দূতাবাস বন্ধ হলেও মুম্বই ও হায়দরাবাদে আফগান কনসুলেটগুলি চালু থাকবে। এই নিয়ে অবশ্য আফগান দূতাবাস বিবৃতি জারি করে বলে, 'এই মিশনগুলি কোনও পদক্ষেপ করলে তা নিয়ে আমরা অবগত নই। এই কনসুলেটগুলি নির্বাচিত বৈধ সরকারের হয়ে নয়, বরং অবৈধ শাসকদের হয়ে কাজ করছে।' উল্লেখ্য, মুম্বই এবং হায়দরাবাদের কনসাল জোরেলদের এর আগের আশরাফ ঘানির সরকারই নিয়োগ করেছিল। তবে তালিবান ক্ষমতায় আসার কয়ে কমাস পরই নাকি তারা বর্তমান শাসকদের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। এদিকে আফগান দূতাবাস বন্ধ প্রসঙ্গে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এখনও কিছু বলেনি। এদিকে নিজেদের বিবৃতিতে আফগান দূতাবাস দাবি করে, তাদের যা সম্পত্তি রয়েছে তা ভারত সরকারের হস্তগত হবে। এদিকে বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখিত 'অন্তর্দ্বন্দ্ব' নিয়েও মুখ খোলে দূতাবাস। তারা দাবি করে, এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে তারা মেনে নেয়, দূতাবাসে কাজ করার লোকের অভাব দেখা দিয়েছে। এদিকে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আফগান কূটনীতিকদের আবেদন, ভবিষ্যতে যেন আফগানিস্তানের 'বৈধ সরকারের' হাতেই তুলে দেওয়া হয় দূতাবাসের সম্পত্তি। আর নিয়মিত যেন আফগান পতাকা উত্তোলন করা হয় সেই প্রাঙ্গনে।