সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব বিরোধীদের। রাহুল গান্ধীর জ্বালাময়ী ভাষণ। মণিপুরে ভারতকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গান্ধী। সেই সঙ্গে সামনে এসেছে রাহুলের ফ্লাইং কিস বিতর্ক। তবে এবার বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
সংসদে অমিত শাহ কী জবাব দিলেন জেনে নিন
অমিত শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার প্রতি জনতার অনাস্থা নেই। এটা আসলে জনতাকে বিভ্রান্ত করা।
আমি পুরো ভাষণ ভালো করে শুনেছি। এটা জনতার ইচ্ছার প্রতিফলন নয়। এটা শুধু বিভ্রান্তি করার জন্য করা হচ্ছে।
ভোট করার হলে করুন। জনতার বিশ্বাস তো রয়েছে আমাদের উপর। দেশের ৬০ কোটি মানুষের কল্যাণের কাজ করছেন নরেন্দ্র মোদী। কোথাও জনতার আস্থায় চিড় ধরেনি।
এই সরকার পুরো দেশকে বলতে চাইছে স্বাধীনতার পরে কোনও সরকারের প্রতি যদি মানুষের বিশ্বাস থাকে তবে সেটা মোদী সরকারের উপর।
দুদুবার এই সরকারকে পুরো জনমতের ভিত্তি নির্বাচিত করা হয়েছে।
যদি কেউ লোকপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকেন তবে তিনি নরেন্দ্র মোদী। একটা ছুটি না নিয়েও ১৭ ঘণ্টা কাজ করেন মোদী।
ইউএপিএ সরকারের অনাস্থা থেকে বাঁচার জন্য লোকসভা নিয়ম, পরম্পরাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কাজ করেছিল। কোটি টাকা দিয়ে কংগ্রেস সেই সময় সরকার বাঁচিয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী অটলজী একটা সময় বলেছিলেন সংসদ যা চায় সেটাই হবে। তবে আমরা সেই সময় কি কংগ্রেসের পথে বাঁচাতে পারতাম না? কিন্তু সেটা আমরা করিনি। আসলে অনাস্থা এলে বোঝা যায় শরিক দলের ভূমিকা কী?
আমাদের যেন তেন প্রকারেন আমরা সরকার বাঁচানোর জন্য নই। আমরা জনমত কিনি না।
অমিত শাহ বলেন, ধৈর্য্য রাখুন এটা তো শুধু ট্রেলার। আরও শুনতে হবে।
১১ কোটি পরিবারের কাছে শৌচালয় ছিল না। সেই যন্ত্রণা মুছিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার।
আমরা কারোর ঋণ মকুবে বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি যাতে তাদের ঋণ নিতে না হয়। আমরা কৃষকের পরিস্থিতি নিয়ে সমীক্ষা করেছি। মোদীজি গোটা জীবনের জন্য কৃষকের ঋণমুক্ত করে দিয়েছি। কংগ্রসের মতো ঋণ মকুবের ললিপপ দিইনি।
মোদীজি ৫ লাখ টাকার স্বাস্থ্য বিমা করে দিয়েছেন ভারতের মানুষের। আমরা জনধন যোজনা করেছি। নীতীশজি শুনে রাখুন। আপনারা শুধু বলেই গেলেন। কাজ করলেন না।
করোনার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও সমস্ত মানুষ একযোগে কাজ করেছেন। রাহুলজী, অখিলেশজী বার বার বলতেন মোদী ভ্যাকসিন। মোদী সরকার বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়ে গোটা দেশকে করোনা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।
'আপনাদের অবিশ্বাস থাকতে পারে, দেশের জনতার বিশ্বাস মোদী সরকারের উপর'।
এই সংসদে থাকা এক নেতাকে ১৩ বার লঞ্চিং করা হয়েছিল। প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ করেছেন। তিনি কলাবতীর বাড়িতে খেতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কলাবতীর জন্য তিনি কী করলেন? তাঁর পরিবারের কল্য়াণের সব কাজ করেছে মোদী সরকারই। সেই কলাবতীর পরিবারেরও আস্থা মোদী সরকারের প্রতি।
মোদী আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। গোটা বিশ্বের আস্থা ভারতের উপর। আগামী ৫ বছরে ভারত বিশ্বের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট জায়গায় চলে যাবে।
১৪ রাষ্ট্র মোদীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। এটা দেশের জনতার সম্মান। তাদের আস্থা মোদীর উপর। আপনাদের না থাকতে পারে।
আতঙ্কবাদীরা জওয়ানের গলা কেটে চলে যেত। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে কীভাবে জবাব দিতে হয়। প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে সবথেকে বেশি দুর্নীতি হত আগে। এখন আত্মনির্ভর ভারত।
কৃষকদের সহায়ক মূল্য দিয়েছে মোদী সরকার। ওরা কৃষক, গরিব কারোর মঙ্গলই চায় না। ওরা পরিবার ছাড়া কিছুই বোঝে না। পরিবারবার, দুর্নীতি,তোষনবাদ কুইট ইন্ডিয়া।
পিএফআইকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আমরা বিদেশ থেকে অপরাধীদের নিয়ে এসে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছি। ইউএপিএকে আরও কঠোর করা হচ্ছে। জঙ্গি ছাড়া এনিয়ে অন্যদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কাশ্মীরের সমস্যা মেটাতে ২০১৪ সাল থেকে আমাদের নীতির পরিবর্তন হয়েছে।জঙ্গিমুক্ত করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছি। দুটো সংবিধান নেই পাকিস্তানে। হুরিয়ত, জমিয়তে, পাকিস্তান নিয়ে আলোচনা করব না। যদি চর্চা করতেই হয় এখানকার যুবকদের নিয়ে চর্চা করব। এখন আতঙ্কবাদীদের লাশ নিয়ে মিছিল হয় না। কারণ যেখানে ওরা মারা যায় সেখানে শেষকৃত্য। গান্ধী পরিবার সহ তিনটি পরিবার কাশ্মীরে রাজ করেছে। আর পাথর ছোঁড়ার ঘটনা হয় না কাশ্মীরে। মন্দিরের সুরক্ষা দিয়েছি। ২০২২ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ পর্যটক কাশ্মীরে গিয়েছেন। ৩৩ বছর ধরে মহরম বন্ধ ছিল। সিনেমা হল চলত না, শিকারা চলত না। আমরা চালু করেছি। বামপন্থী উগ্রবাদ ক্রমশ কমেছে।
উত্তরপূর্বে সবদিক থেকে হিংসা কমেছে। মন থেকে উত্তরপূর্বের দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছেন মোদী। । ৫০ এর থেকে বেশিবার মোদী উত্তর পূর্বে গিয়েছেন।
মণিপুর প্রসঙ্গে অমিত শাহ: মণিপুরে হিংসা হয়েছে। এটা মানছি। এটা যন্ত্রণার। পরিস্থিতিকে সমর্থন করি না। এটা আমাদের কাছে লজ্জার। এটা নিয়ে রাজনীতি করাটা আরও লজ্জার। বার বার বলা হচ্ছে যে এই সরকার নাকি মণিপুর নিয়ে চর্চা করতে চায় না। কিন্তু আমি চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম মণিপুর নিয়ে চর্চা করতে তৈরি। কিন্তু বিরোধীরা তো আলোচনাই করতে চায় না। মণিপুরে ৬ বছরে একদিনও কার্ফু বা বনধ হয়নি। মিয়ানমারের সীমান্ত দিয়ে কুকি ভাইরা এখানে আসতে শুরু করেছিলেন। এটি নিয়ে সেখানকার আদিবাসীরা সুরক্ষার অভাব বোধ শুরু করেন। তবে ওখানে ফেন্সিং নেই। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ফেন্সিংয়ের।
তবে কুকিদের আমরা পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু করেছি।
অমিত শাহ রসিকতা করে বলেন, স্যার একটু সময় বেশি দেবেন। বিরোধীরা মাঝপথে কথা বলে ফেলছেন। ওদের পার্টি ওদের কথা বলতে দেন না বলে ওরা আমার মাঝে কথা বলে ফেলছেন।