২০১৯ সালের ৫ অগস্টের আগে পর্যন্ত বিশেষ মর্যাদা ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের। সেখানের নিজেস্ব সংবিধান ছিল। ছিল আলাদা পতাকাও। তবে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর সেই সংবিধান অকার্যকর হয়েছে। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টে চলা ৩৭০ ধারা সংক্রান্ত শুনানি চলাকালীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যবেক্ষণ করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, জম্মু ও কাশ্মীরের যে সংবিধান ছিল তা ভারতের সংবিধানের ওপরে নয়। শীর্ষ আদালত জানায়, ভারতের সংবিধান গোটা দেশে প্রযোজ্য। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে যখন জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, তখন এই এলাকাও ভারতের সংবিধানের বিধানের অন্তর্গত চলে আসে। উল্লেখ্য, ভারতের সংবিধানের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের জন্য জম্মু ও কাশ্মীর গণপরিষদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক কি না, তা খতিয়ে দেখতেই সেই পর্যালোচনা চলছিল।
সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীদের যুক্তি ছিল, ৩৭০ ধারা আইনত প্রত্যাহার করতে জম্মু ও কাশ্মীরের গণপরিষদকে সিদ্ধান্ত নিতে হত। ভারতের সংবিধানের অধীনে একতরফা ভাবে সংসদে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বলে, আমাদের সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীরের গণপরিষদের উল্লেখ রয়েছে। তবে ১৯৭ সালের ২৬ জানুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান কার্যকরের পর ভারতীয় সংবিধানে সেখানকার গণপরিষদের কোনও উল্লেখ ছিল না। আমাদের সংবিধান একটাই সংবিধানের কথা বলে।
এর আগে ৩৭০ ধারা ইস্যুতে গণভোটের আর্জি জানিয়েছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। সিব্বল দাবি করেছিলেন, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার তখনই সম্ভব যখন মানুষ সেটা চাইছে। তিনি বলেন, 'মহামান্য আদালতের নিশ্চয় ব্রেক্সিট মনে আছে। কী হয়েছিল? সেখানেও গণভোট চাওয়ার কোনও সাংবিধানিক বিধান ছিল না। তবে যখন কোনও সম্পর্কে ছেদ ঘটাতে চান, তখন মানুষের মত জানাটা খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ এই ধরনের সিদ্ধান্তের মূলে মানুষই রয়েছে।' তবে এই পরামর্শর জবাবে সুপ্রিম বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, ব্রেক্সিটের মতো গণভোট এদেশে সম্ভব নয়। পাশাপাশি শীর্ষ আদালত বলে, 'সেদেশের তৎকালীন সরকার রাজনৈতিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোট করিয়েছিল। তবে আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোতে এরকম কোনও বিধান নেই।' পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট এও প্রশ্ন করে, যদি আইন প্রণেতারা ৩৭০ ধারা এবং জম্ম-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা চিরকাল অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইত, তাহলে বিগত ৬ দশকে কেন সংবিধান সংশোধন করা হল না?
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। তার জেরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা চলে যায়। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে ফেলা হয়। যে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয় একগুচ্ছ মামলা। যে মামলাগুলি মিলিয়ে ২ অগস্ট থেকে দৈনন্দিন ভিত্তিতে শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে চলছে শুনানি। এই সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ছাড়াও আছেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, সঞ্জীব বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সূর্যকান্ত।