জম্মু ও কাশ্মীরের সার্বভৌমত্ব ক্ষণস্থায়ী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভারতের ঐক্য। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টকে জানাল কেন্দ্রীয় সরকার।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল এবং তার জেরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে ১৪৪টি আবেদনের শুনানি চলেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বেঞ্চে।
এ দিন কেন্দ্রের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, ‘১৯৫৯ সালে বিচারপতি প্রেমনাথ কাউলের দেওয়া রায়ে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, ২৫.১০.১৯৪৭ তারিখে ভারতের সঙ্গে একটি গৃহীতকরণ চুক্তি সই করেন কাশ্মীরের মহারাজা যার জেরে ওই ভূখণ্ড স্বাধীন অঙ্গরাজ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়।’
এর পর প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিক ভি পি মেননের লেখা ‘ইন্টিগ্রেশন অফ দ্য ইন্ডিয়ান স্টেটস’ বইয়ের অংশ আদালতে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল। বইটির ওই অংশে পাকিস্তান ও কাশ্মীরের মহারাজের মধ্যে মতানৈক্যের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় রাজ্যসমূহের একীকরণ সম্পর্কিত এই বিবরণে দেশের ঐক্যের সাক্ষ্য রয়েছে। দেখাতে চাই জম্মু ও কাশ্মীরের সার্বভৌমত্ব অবশ্যই ক্ষণস্থায়ী ছিল। আমরা একটি বহু রাজ্যের সমষ্টি।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিযোগ, কাশ্মীরে তাণ্ডব তৈরি করতে সন্ত্রাসবাদীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তান। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে মহারাজের যে স্থিতাবস্থার চুক্তি হয়েছিল, পরবর্তীকালে তা লঙ্ঘন করে ইসলামাবাদ। কাশ্মীর দখল করতে ট্রাকবোঝাই যুদ্ধবাজ উপজাতীয়দের কাশ্মীর দখল করতে পাঠায় পাকিস্তান। তাঁর রাজ্যে উপস্থিত সন্ত্রাসবাদীদের রুখতে ভারতে সাহায্য চান মহারাজা। নথি বলছে সেই সময় কাশ্মীরে অশান্তি ছড়াতে সন্ত্রাসবাদীদের পাঠিয়েছিল পাকিস্তান।’
এর পরে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া দু’টি রায়ের উল্লেখ করেন বেণুগোপাল, যার একটি ১৯৫৯ সালে দেওয়া বিচারপতি প্রেম নাথ কাউলের রায় এবং দ্বিতীয়টি ১৯৬৮ সালে দেওয়া বিচারপতি সম্পত প্রকাশের রায়। এই দুই রায়ের কথা এর আগে উল্লেখ করেছেন ৩৭০ ধারার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানো আবেদনকারীদের আইনজীবীরা।
বুধবার আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী দীনেশ দ্বিবেদী মামলাটি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া পূর্বতন দুটি রায়ের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে বলেই বর্তমান মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে রেফার করা প্রয়োজন।
গত ৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দ্বিবেদী অভিযোগ করেন, ‘প্রকারান্তরে জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধানকেই নিশ্চিহ্ন করা হল। প্রশাসনিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সংবিধান লোপাট করার এ এক বড় উদাহরণ। কেন্দ্রের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের যোগাযোগের একমাত্র আশার আলো ছিল ৩৭০ ধারা। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার মতামত নেওয়া উচিত ছিল।’
তাঁর যুক্তি ছিল, জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান যে হেতু ৩৭০ ধারা অথবা ভারতীয় সংবিধানের অধীনে তৈরি হয়নি, সেই কারণে তা প্রশাসনিক বলপ্রয়োগের দ্বারা খারিজ করা যায় না।