প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনও পূর্ণ সদস্য দেশের বিরুদ্ধে খেলতে নামে ভানুয়াটু। প্রথম সাক্ষাতেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল ৩ লক্ষ মানুষের ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্র। স্বাভাবিকভাবেই ভানুয়াটু ক্রিকেটের নতুন অধ্যায় শুরু হয় জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এই জয় দিয়ে। তবে এই জয় যে শুধু ১১ জন ক্রিকেটারের নয়, বরং সারা দেশের মানুষের, সেই কাহিনী লেখা থাকবে না স্কোরবোর্ডে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানচিত্রে ভানুয়াটু পরিচিতি পায় মহিলা টি-২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারের যোগ্যতা অর্জন করার পরে। ওদেশের পুরুষ অথবা মহিলা, প্রথম কোনও দল এই প্রথমবার কোনও আইসিসি ইভেন্টের কোয়ালিফায়ার পর্যন্ত পৌঁছয়।
আমিরশাহিতে অনুষ্ঠিত মহিলা টি-২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারে ভানুয়াটু জায়গা করে নেয় বি-গ্রুপে। আয়োজক আমিরশাহি ছাড়াও এই গ্রুপে রয়েছে আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবোয়ে। প্রথম ম্যাচেই ভানুয়াটুর মহিলা ক্রিকেট দলের লড়াই ছিল জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে। জিম্বাবোয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ। স্বাভাবিকভাবেই ওদেশের ক্রিকেট তুলনায় উন্নত।
সুতরাং, ভানুয়াটুর লড়াই সহজ ছিল না মোটেও। তবে সকলকে চমকে দিয়ে তারা এমন অবিশ্বাস্য পারফর্ম্যান্স উপহার দেবে, সেটা অনুমান করাও সম্ভব ছিল না কারও পক্ষেই। আমিরশাহিতে খেলতে আসার আগে ভানুয়াটুর ক্রিকেটারদের কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ছিল না। জার্সি থেকে শুরু করে ব্যাট-প্যাড গ্লাভজোড়া, সব নিজেদেরই কিনতে হতো। পর্যাপ্ত ম্যাচ-ফি পাওয়া তো সেখানে দূর অস্ত।
কোয়ালিফায়ারে অংশ গ্রহণের আগে চাঁদা তুলে ক্রিকেটারদের সরঞ্জাম কেনে ওদেশের ক্রিকেট সংস্থা। ক্রাউড ফান্ডিংয়ে ক্রিকেটারদের নিজেদের অবদানও ছিল বেশ কিছুটা। সেই নিরিখে এটা বলা মোটেও ভুল হবে না যে, টাকা আয় করা তো দূরের কথা, উল্টে নিজেদের টাকা খরচ করে কোয়ালিফায়ার খেলতে আসেন ভানুয়াটুর মহিলা ক্রিকেটাররা।
এমন কষ্ট করে ক্রিকেট খেলতে আসা যে স্বার্থক, সেটা বোঝা যায় প্রথম ম্যাচের পারফর্ম্যান্সেই। জিম্বাবোয়েকে প্রথম ম্যাচেই ভানুয়াটু পরাজিত করে ৬ উইকেটে। তাও আবার ২১ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করে তারা। আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নামে জিম্বাবোয়ের মহিলা ক্রিকেট দল। তারা ১৩.৩ ওভারে মাত্র ৬১ রানে অল-আউট হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:- শূন্য রানে ৭ উইকেট, T20I-তে বিশ্বরেকর্ড, সেরা ৫ বোলিং পারফর্ম্যান্সে চোখ রাখুন
মেয়েদের আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে কোনও সহযোগী দেশের বিরুদ্ধে কোনও পূর্ণ সদস্য দেশের এটিই সব থেকে কম রানে অল-আউট হওয়ার হতাশাজনক রেকর্ড। এস মায়ের্স ১৬, তিরিপানো ১১ ও জোসেফিন ১০ ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। ভানুয়াটুর নাসিমানা নাভাইকা ৪ ওভারে ১৩ রান খরচ করে ৪টি উইকেট নেন। ভেনেসা ভিরা ১৪ রানে ৩টি উইকেট নেন। ১০ রানে ২টি উইকেট দখল করেন রাচেল অ্যান্ড্রু।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভানুয়াটু ১৬.৩ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ৬২ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায়। নাসিমানা ৩৬ বলে ২১ রান করেন। ১০ রানে নট-আউট থাকেন অ্যালভিনা। ম্যাচের সেরা হন নাসিমানা।