অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা করতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার সুদের হার বাড়িয়ে দিল৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে এমন আরও পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে ইসিবি৷ কোনও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করছে, তা সাধারণত সরকার ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মাথাব্যথার কারণ হয়৷ সাধারণ মানুষ সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখান না৷ কিন্তু ইউরোপের ১৯টি দেশের অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর ভালমন্দ দেখাশোনার দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানের সেই ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব ভিন্ন৷ এর আগেও ইউরোপে একাধিক সংকটের সময় পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ইসিবি৷ ফলে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির মতো ধাক্কা থেকে রক্ষা পেয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছোটবড় শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান৷ রাষ্ট্রও দেউলিয়া হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছে৷
ইউক্রেন সংকটের জের ধরে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইউরো এলাকায় মূল্যস্ফীতি লাগামহীন হয়ে ওঠা সত্ত্বেও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতকাল শুধু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার ইসিবি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জোরাল সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল৷ সুদের হার শূন্য দশমিক সাত পাঁচ হারে বাড়িয়ে শীতের কঠিন মাসগুলির আগে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আর্থিক বাজারকে আশ্বস্ত করতে আসরে নামলো এই প্রতিষ্ঠান৷ সেইসঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে সুদের হার প্রয়োজনে আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান৷ গত প্রায় ১১ বছর ধরে সুদের হার কার্যত শূন্যে আটকে রাখার পর এমন রেকর্ড বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ আগস্ট মাসে ইউরো এলাকায় মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশ অতিক্রম করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না৷ সেইসঙ্গে মার্কিন ডলারের সঙ্গে ইউরোর বিনিময় মূল্য কমে চলায়ও দুশ্চিন্তার কারণ বাড়ছিল৷
প্রশ্ন হল, ইসিবির এমন সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের কী সুবিধা হবে? ইউরোপে বর্তমান সংকটের জের ধরে মূল্যস্ফীতি আয়, ব্যয়, সঞ্চয়-– সব হিসেব গোলমাল করে দিচ্ছে৷ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দ্রুত কমে চলেছে৷ শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানও ব্যয়ের ধাক্কা সামলে আর বিনিয়োগ করতে পারছে না৷ বেতন ও মজুরি বাড়ালে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এমন দুষ্টচক্র এড়াতে সুদের হার সহায়ক হতে পারে৷ কারণ সুদের হার অনুযায়ী মূলধনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হয়৷
শুধু ইউরো এলাকাই এ যাত্রায় সংকটের মুখে পড়েনি৷ কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগেই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা শুরু করলেও ইসিবি এতকাল কোনও পদক্ষেপ নেয়নি৷ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ বলেন, মূল্যস্ফীতি স্থায়ী হওয়ায় এবং আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় ইসিবি সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তিনি সুদের হার আরও বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা বলেন৷ কমপক্ষে ২০২৩ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত ইসিবি সেই দিশায় এগিয়ে যাবে বলে লাগার্দ মনে করেন৷
ইসিবির এমন পদক্ষেপকে ঘিরে কিছুটা বিস্ময় দেখা দিলেও আর্থিক বাজার এমন সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত ছিল৷ তবে শীতের মাসগুলিতে ইউরোপে মন্দার ধাক্কার আশঙ্কা পুরোপুরি দূর হচ্ছে না৷ রাশিয়া থেকে গ্যাসের সরবরাহ এখনই বিঘ্নিত হওয়ায় বাস্তব পরিস্থিতির স্বাদের জন্য আর অপেক্ষা করতে হচ্ছে না৷ ফলে অর্থনীতি জগত কিছুটা প্রস্তুত রয়েছে৷ সবকিছু ঠিকমতো চললে ইসিবি আগামী বছর সামান্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অথবা সামান্য মন্দার আশা করছে৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)