সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির গোডাউন। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটাই দেশজোড়া বেআইনি গাড়ি চক্রের হেড অফিস। মহারাষ্ট্রের পানভেলে রীতিমতো অফিস সাজিয়ে চলছিল কোটি কোটি টাকার কারবার।
গত কয়েক মাস ধরেই নজর রাখছিল মুম্বই পুলিস। সুযোগ বুঝে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ধরপাকড়। কান টানতেই মাথা আসে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত মোট ৯ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশর ক্রাইম ব্রাঞ্চ। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয় মোট ১৫১টি গাড়ি।
চোরাই গাড়ির মোট বাজারদর হিসাব করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশকর্তাদের। নাভি মুম্বইয়ের পুলিস কমিশনার বিপিনকুমার সিং জানান, এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া গাড়ির মোট মূল্য ৭ কোটির টাকারও বেশি।
কীভাবে 'অপারেট' করতে এই গ্যাং? এই গ্যাং-এর কারবারের মূলে ছিল বাতিল হয়ে যাওয়া BS-IV ইঞ্জিনের নতুন গাড়ি। মহারাষ্ট্র তো বটেই, তাছাড়াও উত্তর ও মধ্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়ানো ছিল জাল। দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাট, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, হিমাচলপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ ও পঞ্জাবের বিভিন্ন নতুন গাড়ি বিক্রেতার গোডাউন থেকে কেনা হত এই ধরণের বাতিল গাড়ি। ব্যান হওয়া ইঞ্জিনের জন্য নতুন অব্যবহৃত গাড়িগুলি পড়েই থাকত গাড়ি ডিলারদের গোডাউনে। ফলে, প্রায় জলের দরেই কিনে নিত গ্যাংয়ের সদস্যরা।
এরপর শুরু হত আসল খেলা। প্রথমেই গাড়ির নম্বর প্লেট আর চ্যাসি নম্বর বদলে ফেলা হত। চ্যাসি নম্বর প্রিণ্ট করার এরকম একটি মেশিনও হায়দরাবাদ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিস।
নম্বর বদলানোর পরেই গাড়ির নকল কাগজপত্র তৈরি করা হত। এরপর মোটর ভিয়েকলস্ থেকে সেই গাড়িটি নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করা হত।
এরপর গ্যাংয়ের আরও একটা গ্রুপ লেগে যেত সেই গাড়িগুলি বিক্রির কাজে। বেশ সস্তায় বিক্রি করায় ক্রেতারও অভাব হত না। সাধারণত এক রাজ্য থেকে কেনা গাড়ির এভাবে সংখ্যা ও কাগজ বদলে সেটা অন্য কোনও রাজ্যে বেচা হত।
ঝাঁ চকচকে গাড়ি, নতুন রেজিস্ট্রেশন, সস্তা দাম দেখে কোনও কোনও ক্রেতার সন্দেহ হত বটে। তখন তাদের আশ্বাস দেওয়া হত এই বলে যে, এগুলি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি। সারিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
গ্রেফতার হওয়া গ্যাং সদস্যদের মধ্যে আছে শাবান রফিক কুরেশী, আনাম সিদ্দিকি, বৈষম শেখ, মনোহর যাদব, প্রশান্ত শিবারার্থী, গৌরব ডেমলা, রশিদ খান, চন্দ্রশেখর গাড়েকর ও ইমরান চোপড়া। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে অপারেশান চালাত তারা। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৪২০ ও ৪৬৫ নম্বর ধারায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে মুম্বই পুলিস।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে দেশে নতুন BS-IV গাড়ি বিক্রি বন্ধ হয়েছে। তার জায়গায় এসেছে BS-VI এমিশনের ইঞ্জিনের বিধি। ফলে সেই সময়ে পরে থাকা পুরনো স্টকের রেজিস্ট্রেনও আর সম্ভব নয়। সেই পড়ে থাকা বাতিল নতুন গাড়ি নিয়েই এভাবে ব্যবসার ফন্দি আঁটে এই গ্যাং।