কবে করোনাভাইরাস টিকা মিলবে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হল না। বে কেন্দ্রের তরফে জানানো হল, ভারতে তৈরি দুটি ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’-এর প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে ‘দুর্দান্ত সুরক্ষা’-র প্রমাণ মিলেছে। আপাতত সেগুলির দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। যেগুলি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ক্যাডিলা হেলথকেয়ার লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করছে ভারত বায়োটেক।
দেশের সম্ভাব্য টিকাগুলির কোন পর্যায়ে আছে, সেই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে জানান, আইসিএমআর-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির (পুণে) ভাইরাস আইসোলেট ব্যবহার করে একটি ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’ তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক। ইঁদুর, খরগোশের মতো ছোটো প্রাণীর উপর সুরক্ষা এবং সহনশীলতা সংক্রান্ত গবেষণার পর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে সম্ভাব্য করোনা টিকার চরিত্রায়ন করা হচ্ছে। বড় প্রাণীদের উপর গবেষণা-সহ প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রায়ালে ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের দুর্দান্ত সুরক্ষা উঠে এসেছে। অনাক্রম্যতা পরীক্ষা চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালু আছে।’
পাশাপাশি একটি ডিএনএ টিকা (জাইডকোভ ডি বা ZydCov D) তৈরি করেছে ক্যাডিলা হেলথকেয়ার লিমিটেড। ইঁদুর, খরগোশের মতো ছোটো প্রাণীর উপর বিষক্রিয়া সংক্রান্ত প্রি-ক্লিনিকাল গবেষণা করা হয়েছে। সেই সম্ভাব্য টিকা সুরক্ষিত বলে জানা গিযেছে। বড় প্রাণীদের দেহে সমান্তরাল প্রি-ক্লিনিকাল গবেষণার জন্য আইসিএমআরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ক্যাডিলা।
এরইমধ্যে সাংবাদিক বৈঠকে আইসিএমআরের ডিজি বলরাম ভার্গব জানান, ভারতে তিনটি সম্ভাব্য করোনা টিকা (অক্সফোর্ডের করোনা টিকা নিয়ে) ক্লিনিকাল ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ করেছে জাইডাস ক্যাডিলা এবং ভারত বায়োটেক। পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ওরা নিয়োগ করছে।’
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষে চৌবে আরও জানান, বিশ্বের আরও দুটি ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’-এর ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য হাত মিলিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই) এবং আইসিএমআর। তার মধ্যে একটি হল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুইডিশ-ব্রিটিশ বায়োটেক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার চ্যাডক্স১-এস (ChAdOx1-S০)। ১৪ টি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জায়গায় দ্বিতীয়/তৃতীয় পর্যায়ের সেতুবন্ধনকারী গবেষণা শুরু করেছে আইসিএমআর। তাতে মূল প্রতিষ্ঠান হল চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ ইন টিউবারকিউলোসিস।
আপাতত ভারতে অবশ্য সেই ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’- ট্রায়াল স্থগিত আছে। বিষয়টি নিয়ে আইসিএমআরের ডিজি বলেন, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ের বি৩ ট্রায়াল শেষ করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। ওরা সাতদিনের বিরতি নিয়েছে এবং ছাড়পত্রের পর তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল (১৪ টি জায়গায় ১,৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে) শুরু করবে।’
চৌবে জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড ছাড়াও আমেরিকার নোভাভ্যাক্সের তৈরি ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’-এর ক্লিনিকাল গবেষণার জন্য যুক্ত হয়েছে সেরাম এবং আইসিএমআর। সেরাম টিকা উৎপাদনের পর আগামী অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগে সেটির ট্রায়াল শুরু করা হবে। সেই ট্রায়ালের নেতৃত্ব দেবে পুণের ন্যাশনাল এইডস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এছাড়াও ভারতে করোনার টিকা তৈরির চেষ্টায় সামিল হয়েছে প্রেমাস বায়োটেক, ইপিজেন বায়োটেক, লুক্সমাত্র ইনোভেশনস, বায়োলজিকাল ইভান্সের মতো সংস্থা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, সেই সম্ভাব্য টিকাগুলি প্রি-ক্লিনিকাল পর্যায়ে আছে।
তবে করোনার টিকা কবে মিলবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও সময় বলেননি চৌবে। তিনি বলেন, ‘কোভিড ১৯-এর জন্য দ্রুত সুরক্ষিত এবং কার্যকরী টিকা নিয়ে আসার জন্য নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু টিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিল পর্যায়ের কারণে নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন।’
আপাতত অবশ্য রাশিয়ার তৈরির করোনা টিকার জন্য হাত মেলানোর বিষয়ে আলোচনা বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও গবেষণা শুরু হয়নি।