ক্রমাগত স্লোগান দিচ্ছিলেন বিরোধী সাংসদরা। কিন্তু বিরোধীদের আপত্তিতে কোনওরকম কর্ণপাত না করে কৃষি বিল পাশ করিয়ে নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের অনুমোদন পেলেই বিলগুলি আইনে পরিণত হবে।
লোকসভায় আগেই দু'টি কৃষি সংস্কার সংক্রান্ত বিল - ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ বিল পাশ হয়ে গিয়েছিল। অঙ্কের হিসাবে রাজ্যসভায় জয় নিশ্চিত থাকলেও দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে কিছুটা চাপে ছিল মোদী সরকার। বিশেষত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে শিরোমণি আকালি দলের হরসিমরত কৌর বাদলের ইস্তফার ফলে সেই চাপ আরও কিছুটা বেড়েছিল।
তারইমধ্যে রবিবার সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ সংসদের উচ্চকক্ষে দুটি কৃষি বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। তিনি দাবি করেন, নয়া বিলের ফলে কৃষকরা নায্য মূল্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। যদিও বিল নিয়ে প্রথম থেকেই সরব হন বিরোধীরা।
কংগ্রেসের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়, কৃষকদের ‘মৃত্যু পরোয়ানায়’ স্বাক্ষর করা হবে না। দুটি কৃষি বিল সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানান তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন, সিপিআইএমের কে কে রাগেশ, ডিএমকের ত্রিচি সিবা এবং কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল। শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নায্যমূল্য প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না। এটা শুধু গুজব। তাহলে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুজবের উপর ভিত্তি করে ইস্তফা দিলেন?’
শিবসেনা সাংসদ যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ইস্তফার কথা তোলেন, সেই হরসিমরত কৌর বাদলের দলের সাংসদ নরেশ গুজরাল বলেন, 'সবপক্ষের মতামত শোনার জন্য এই বিলগুলি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো উচিত। এটা মনে করবেন না যে পঞ্জাবের কৃষকরা দুর্বল।' অপর বিজেপি ঘনিষ্ঠ বিজুু জনতা দল আবার বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করার আর্জি জানায়।
তাতে অবশ্য কোনও কাজ হয়নি। বরং নির্ধারিত সময়ের পরেও (করোনা বিধির কারণে দুপুর একটার সময় রাজ্যসভার অধিবেশন শেষ হয়ে যায়) কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী বিবৃতি দিতে থাকেন। ধ্বনি ভোটের জন্য নির্ধারিত সময়ের পরও অধিবেশন চালু রাখেন ডেপুটি চেয়ারম্যান। কিন্তু বিরোধীরা দাবি জানায়, ধ্বনি ভোট নেওয়া যাবে না। সাধারণ ভোট করতে হবে। তাতে অবশ্য আমল দেওয়া হয়নি। তারপরই রাজ্যসভায় তুুমুল বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এতক্ষণের বিরোধীদের চেঁচামেচি আরও বৃদ্ধি পায়। ওয়েলে নেমে পড়েন তাঁরা। রাজ্যসভার নিয়ম পালন করা হচ্ছে না অভিযোগ তুলে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশকে রুল বুক দেখানোর চেষ্টা করেন ডেরেক। তাঁকে সরিয়ে দেন রাজ্যসভার মার্শাল। সেই হই-হট্টগোলের জেরে ১০ মিনিট মুলতুবি করা হয়। তারপর বিরোধীদের তুমুল স্লোগান সত্ত্বেও ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় দুটি বিল।
বিল পাসের বিষয়টি 'সংসদীয় ব্যবস্থার জন্য দুঃখজনক দিন' হিসেবে অভিহিত করে ডেরেক জানান, ধ্বনি ভোটে বিল পাশের প্রতিবাদে সংসদের ভিতরে ১২ জন সাংসদ দুপুর তিনটে পর্যন্ত বসে থাকবেন। তিনি বলেন, 'এখানেই শেষ হচ্ছে না। আমাদের কাছে ভিডিয়ো প্রমাণ আছে।উপযুক্ত সময়ে তা প্রকাশ করা হবে।' উল্লেখ্য, দুপুর তিনটে থেকে লোকসভার অধিবেশন শুরু হয়। তার আগে দু'ঘণ্টা স্যানিটাইজেশনের কাজ চলে। সেজন্য দুপুর একটায় রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। রবিবার ধ্বনি ভোটের জন্য তা হয়নি।
বিরোধীদের অভিযো উড়িয়ে রাজ্যসভার বাইরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা দাবি করেন, নয়া বিলের ফলে কৃষিক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংস্কার হবে এবং বিরোধীরা সেই বিলের প্রতিবাদ করে প্রমাণ করলেন যে তাঁরা কৃষক-বিরোধী।
নাড্ডা যখন কথাগুলি বলছেন, তথন পঞ্জাব, হরিয়ানায় তখনও বিক্ষোভে দেখিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।