এ বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে শ্রম দফতরের প্রথম ট্যাবলোতে স্থান পেতে চলেছে কোভিডের কোপে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের অদম্য লড়াইয়ের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন এবং তারই সঙ্গে রাজনৈতিক বার্তা।
কোভিড অতিমারীর জেরে লকডাউনের কোপে পড়া রোজগার হারানো শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতর, যার বেশ কয়েকটির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতেই প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথম ট্যাবলো বের করতে চলেছে শ্রম দফতর।
ট্যাবলোর থিম সাজানো হয়েছে হার্ড হ্যাট ও সেফটি গিয়ার পরিহিত শ্রমিকদের নিয়ে। সঙ্গে থাকছে স্লোগান, ‘মেহনত কো সম্মান। অধিকার এক সম্মান।’ অর্থাৎ, শ্রমের জন্য সম্মান, সকলের সমানাধিকার।
শ্রম দফতরের এক মুখপাত্র স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের ঠিক পরেই চালু হতে চলেছে নতুন শ্রমনীতি, যার মূল লক্ষ্য হল অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনে আনা। শ্রমনীতির শর্তাবলী চূড়ান্ত করতে চলতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে শেষ পর্যায়ের আলোচনা সম্পূর্ণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার জানিয়েছেন, ‘ট্যাবলোর নকশায় শ্রমিকদের ভালো থাকা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের তিনটি শ্রমনীতি বিলের প্রথমটিতে জোর দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং কাজের পরিবেশের উপরে। দ্বিতীয় বিলটিতে প্রাধান্য পেয়েছে শিল্প সম্পর্ক নীতি। তৃতীয় বিলে গুরুত্ব পেয়েছে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার দিকটি। এই তিন বিল ২৪টি কেন্দ্রীয় শ্রম আইন সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে এবং গত সেপ্টেম্বর মাসে এনডিএ সরকারের সংস্কার নীতির অংশ হিসেবে সংসদে পাশ করানো হয়েছে।
তবে নতুন শ্রমনীতি নিয়ে বিশেষ উচ্ছ্বসিত নয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। সেন্টার ফর ট্রেড ইউনিয়নস-এর নেতা তপন সেন জানিয়েছেন, গত ২০ জানুয়ারি কেন্দ্রীায় শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রের নতুন সংস্কারগুলি খারিজ করে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদল। তাঁদের মতে, নতুন শ্রমনীতি আখেরে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী এবং কর্তৃপক্ষের হাতে ইচ্ছা অনুযায়ী ছাঁটাইয়ে সহযোগী। তপন সেনের দাবি, ‘আমরা চাই নতুন শ্রমনীতি খারিজ করে আবার আলোচনা শুরু হোক। প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো বের করার পরিকল্পনা আসলে সরকারের অন্যায় ঢাকা দেওয়ার প্রচেষ্টা।’
জানা গিয়েছে, শ্রম দফতরের ট্যাবলোতে শ্রমিক সেজে অভিনয় করবেন শিল্পীরা। এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন স্ট্র্যান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সংস্থার সদস্য অনিন্দিতা অধিকারী। তাঁর মতে, শ্রমিকদের চূড়ান্ত হেনস্থা করার পরে তাঁদের বীর সাজিয়ে মহান হওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।