দীর্ঘ আইনি লড়াই করে জয়ী হলেও সমাজে এখনও প্রাপ্য অধিকারটি পায়নি ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়। আজও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, শুধুমাত্র ট্রেন, বাস বা বাড়িতে এসে ভিক্ষা করতে দেখা যায় তাঁদের। অর্থাৎ এখন এই সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা সর্বদা নিজেদের জন্য একটি শক্তিশালী পরিচয় তৈরি করার জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। আবার তাঁদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছেন যারা সমাজের কটূক্তি ও মন্তব্য সহ্য করেও ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
ঐশ্বর্য ঋতুপর্ণা প্রধানও তাঁদেরই মধ্যে একজন, যিনি স্কুলের শিক্ষকদের দ্বারা অপমানিত হওয়া সত্ত্বেও, কলেজের হোস্টেলে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েও, মানসিক ট্রমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। যাত্রা শত কঠিন হলেও সফল হয়েছেন। নিজের স্বপ্নকে মরে যেতে দেননি। সমাজের নিষ্ঠুরতা সহ্য করে ঐশ্বর্য শুধু যুদ্ধই করেছেন তা কিন্তু নয়, সফল হয়ে ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সিভিল সার্ভেন্ট হয়ে রেকর্ড করেছেন তিনি।
ওড়িশার কান্ধমাল জেলার কাটিবেগেরি গ্রামের বাসিন্দা প্রথমবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা। তিনি এই সত্যটি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই পরিবর্তিত আচরণ তাঁর অনেক সমস্যা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ঋতুপর্ণার যৌন প্রবৃত্তির কারণে তাঁকে শিক্ষকদেরও অপমান সহ্য করতে হয়েছিল। ক্লাসে লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এসব সমস্যার মধ্যেই তিনি স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন। এর পরে তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন (আইআইএমসি) থেকে পড়েন। জনপ্রশাসনে পোস্ট গ্রাজুয়েশনও করেন।
২০১০ সালে ঋতুপর্ণা প্রধান ওড়িশার রাজ্য সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় একজন যোগ্য পুরুষ প্রার্থী হিসাবে বসেছিলেন। এই সব কিন্তু তাঁর জন্য একেবারেই সহজ ছিল না, তাঁর অসুবিধা এখনও কমেনি। ঐশ্বরিয়ার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে মানুষ বারবার তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে তিনি এই পদের জন্য যোগ্য নন। এরপরে ২০১৪ সালে, সুপ্রিম কোর্ট ট্রান্সজেন্ডারকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে তিনি কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। এরপরে ঐশ্বর্য অবিলম্বে নিজেকে পুরুষ থেকে মহিলাতে রূপান্তর করেন। নিজের জন্য একটি নতুন নামও বেছে নেন, ঐশ্বর্য ঋতুপর্ণা প্রধান। এরপর ওড়িশার রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, ঐশ্বর্য পারাদ্বীপ পোর্ট টাউনশিপে বাণিজ্যিক কর অফিসার হিসাবে কাজ শুরু করেন।