পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্য ট্রেন ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না বলে একাধিকবার অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেজন্য এবার থেকে গন্তব্য রাজ্যের উদ্দেশে ‘শ্রমিক স্পেশ্যাল’ ট্রেন চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্মতির প্রয়োজন হবে না বলে জানাল রেল।
রেলের মুখপাত্র রাজেশ বাজপেয়ী বলেন, ‘শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালানোর জন্য যে স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়া সেই রাজ্যের সম্মতির বাধ্যতামূলক নয়। নতুন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) অনুয়ায়ী গন্তব্য রাজ্যের সম্মতির প্রয়োজন হবে না।’
‘শ্রমিক স্পেশ্যাল’ ট্রেন নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে তরজা বেঁধেছে বিজেপি সরকারের। রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড় শ্রমিক ট্রেনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনীহা দেখাচ্ছে। যদিও বিরোধী সরকারগুলি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা পালটা দাবি করে, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কেন্দ্র অসহযোগিতা করছে।
সেই তরজার মধ্যে দেশজুড়ে একাধিক দুর্ঘটনার জেরে পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে যথেচ্ছভাবে মুখ পুড়েছে কেন্দ্রের। তা থেকে নিজেদের ‘রক্ষা’ করতে বারেবারে পরিযায়ী শ্রমিকদের দায় রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রের তরফে একটি এসওপি জারি করে প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নোডাল কর্তৃপক্ষ তৈরি করার এবং শ্রমিকদের পাঠানো ও গ্রহণের জন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নয়া এসপি-তে জানানো হয়, ট্রেনের সূচি, কোথায় কোথায় ট্রেন দাঁড়াবে, কোথায় যাবে - যাবতীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রেল মন্ত্রক। তবে তার আগে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে প্রয়োজনীয়তা জানা হবে। তারইমধ্যে রেলের নয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে অবশ্য প্রশ্ন উঠছে।
বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভিটেয় ফেরা শ্রমিকদের শরীরের করোনার হদিশ মিলেছে। পশ্চিমবঙ্গেও ‘শ্রমিক স্পেশ্যাল’ ট্রেনে যাত্রীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরের ট্রেনে ফেরা যাত্রীদেরও কেউ করোনায় আক্রান্ত হবেন না, এমনটা বলা অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই ট্রেন চালালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। সোমবার নবান্নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, একসঙ্গে বাইরে থেকে অনেকে এলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য তিনি প্রতিদিন পাঁচ-ছ'টি ট্রেন আনার পক্ষপাতী। যাতে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, শ্রমিক ইস্যুতে যেহেতু বিজেপি ব্যাকফুটে, সেজন্য নিজেদের মুখ বাঁচাতে প্রতিদিন অনেক ট্রেন চালাবে। তাতে অনেক শ্রমিক বাড়ি ফিরলেও আদতে তা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেবে। আর তাতেই বিরোধীদের প্রশ্ন, যদি কোনও কারণে সংক্রমণ বেড়ে যায়, তখন কি দায় নেবে কেন্দ্র? নাকি রাজ্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আড়ালে চলে যাবে বিজেপি সরকার? পরবর্তী দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, জে পি নাড্ডাটা ময়দানে নেমে রাজ্যের দিকে অপদার্থতার আঙুল তুলবেন? আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন বিরোধীরা।