হিংসায় রাশ টানতে অবিলম্বে আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সওয়াল করল ভারত। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশ্বাস দিলেন, কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল তৈরি করতে পারবে না কোন 'বিদেশি শক্তি'। দু'দেশই পুরো অঞ্চলকে সন্ত্রাসবাদের 'গুরুতর বিপদ' থেকে মুক্ত দেখতে চায়।
কাবুল শহরে পানীয় জল সরবরাহের জন্য লালানদার বাঁধ নির্মাণ করবে ভারত। সেই নির্মাণের জন্য মউ স্বাক্ষর করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হানিফ আতমার। সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে আফগানিস্তানে যেভাবে হিংসাত্মক ঘটনা বেড়ে চলেছে এবং 'কাপুরষোচিতভাবে' সাধারণ নাগরিক, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের উপর যে আক্রমণ নেমে আসছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোদী। তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, আফগানিস্তানের পাশে আছে ভারত। মোদীর কথায়, 'আমি প্রত্যেক আফগান ভাই এবং বোনেদের আশ্বাস দিতে চাই যে বাদাখশান থেকে নিমরোজ এবং হেরাট থেকে কান্দাহার পর্যন্ত ভারত আপনাদের সঙ্গে আছে। ধৈর্য, সাহসিকতা এবং দঢ়প্রতিজ্ঞার পথে প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাদের পাশে আছে ভারত।'
বৈঠকে নাম না করে পাকিস্তানের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করেন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসরাফ ঘানি। তিনি জানান, সবপক্ষ এবং তালিবানদের মদতকারীরা যদি সত্যিকারের রাজনৈতিকভাবে সমাধান চান, তাহলে আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে আসবে। একইসঙ্গে সবপক্ষকে 'সার্বভৌমত্বের নিয়ম', জঙ্গিদের 'আশ্রয় দেওয়া' বন্ধ করা এবং নিজেদের প্রতিবেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রবণতা রুখতে হবে। যে বার্তায় ঘানি স্পষ্টতই ইসলামাবাদকে নিশানা করেছেন বলে মত কূটনৈতিক মহলের। ঘানির মতে, কয়েকটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সন্ত্রাসবাদকে পুরো একটি চক্র হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যে ' ধ্বংসাত্মক শক্তি' ওই অঞ্চলের ভবিষ্যতের উপর আশঙ্কার কালো মেঘ তৈরি করছে। পালটা মোদী জানান, আফগানিস্তানের মানুষের মধ্যে ঐক্য শক্তিশালী করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে তাঁদের মধ্যে সেই বিশ্বাস জোগাতে হবে যে তাঁরা যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে পারবেন। মোদী বলেন, 'কোনও বিদেশি শক্তি আফগানিস্তানের উন্নয়ন বা ভারত-আফগানিস্তানর বন্ধুত্ব রুখতে পারবে না।'
নাম না করে পাকিস্তানকে দুষলেও সত্যিকারের সহযোগী হিসেবে ভারতের প্রশংসা করেছেন ঘানি। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের যে সহায়তা প্রদান করেছে, তা আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক সুস্থিতি এবং উন্নয়নের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু'দেশের সাংস্কৃতিক এবং নাগরিক সভ্যতার যোগসূত্র নিয়ে আলোচনার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওয়ালার প্রসঙ্গও তুলেছেন মোদী এবং ঘানি। মোদীকে আফগান রাষ্ট্রপতি বলেন, 'ভারতীয়দের সামনে কাবুলিওয়ালাদের প্রতিচ্ছবি তুলে দেওয়ার জন্য আমরা (রবীন্দ্রনাথ) ঠাকুরকে আবারও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজ কাবুলিওয়ালাদের হয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমি।'