প্রথম আওয়াজটা উঠেছিল এই বাংলা থেকেই। কেন্দ্রীয় সরকারকে ১০০ দিনের কাজ বাড়াতে বলেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তারপর একে একে অন্যান্য রাজ্যও সেই সওয়াল করেছিল। এবার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আসলে এই রাস্তা ছাড়া খেটে খাওয়া মানুষের রোজগার বাড়ানোর আর কোনও পথ নেই। পাঁচজন ভারতীয়ের মধ্যে একজনকে এই কাজে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে খবর।
তাই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে চাঙ্গা করতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে জোর দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সরকারি আধিকারিকরা জানান, ৩২০ কোটি কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। যা আগের তুলনায় ৪০ কোটি বেশি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১০০ দিনের কাজের চাহিদা বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে। আসলে এই পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমেছে। আবার অনেকের চাকরি চলে গিয়েছে। কাজ হারিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।
জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ–সহ আটটি বড় রাজ্য থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প আরও বেশি করে চালু করার অনুরোধ করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরাও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প আরও বেশি করে শুরু করার ব্যাপারে সায় দিয়েছেন। যেভাবে বেতনের পরিমাণ কমছে ও বেকারত্ব বাড়ছে, তাতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের আরও চাহিদা রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অর্থনৈতিক নীতি কমিটিও পূর্বাভাস দিয়েছিল, দেশের অর্থনৈতিক সংকোচন ৯.৫ শতাংশে পৌঁছবে চলতি আর্থিক বছরে।
এই সব কথা মাথায় রেখেই এবার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কর্মদিবস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদী সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য সরকার আরও ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সুতরাং এই খাতে সরকারের খরচের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকায় ঠেকবে।
সরকারি আধিকারিকদের কথায়, গত ৭ অক্টোবরের মধ্যে এই প্রকল্পের ২২১.৯ কোটি কর্মদিবস কাজ হয়ে গিয়েছে। তার জন্য সরকারের খরচ হয়েছে ৬৫,০০০ কোটি টাকা। গত ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই টাকা নাকি দেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আরও টাকা এই প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের চাহিদা বাড়বে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে জুলাইয়ে গড়ে ১১৪ শতাংশ, অগস্টে ৯৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে ৮৬ শতাংশ ও অক্টোবর মাসে ১০৯ শতাংশ কর্মদিবস বেড়েছে।
সরকারি আধিকারিককা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবর্ষে ৩০০ কোটি কর্মদিবস প্রথমেই বাড়ানো হয়েছিল। আটটি বড় রাজ্য থেকে অনুরোধ এসেছে যাতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের সংস্থান আরও বেশি করা যায়। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলাঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব যুগল কিশোর মহাপাত্র জানান, এই মুহূর্তে কর্মদিবস বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগক। কিন্তু এখন যেটা আশু কর্তব্য তা হল, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বিভিন্ন কারণে চাহিদা কম সেই জায়গা চিহ্নিত করা। যাতে সেখানে এই প্রকল্পের সুবিধা বেশি করে পৌঁছে দেওয়া যায়।