একের পর এক রেল ভাঙচুরের ঘটনা নিত্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদল লোক সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার কাছে লখনউ-গোরখপুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছুঁড়ে মারেন। অভিযোগ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসটি ছাগলের পালকে ধাক্কা দিয়েছিল। এর ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্যই তারা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের গায়ে পাথর ছুঁড়ে মারেন। সাম্প্রতিক কালে এমন ঘটনার উদাহরণ একাধিক বার পাওয়া গেছে। ২০২২ সালে বিহারের কিছু পরীক্ষার্থী নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটাগরির পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে রেলের সম্পত্তির ভাঙচুর করেন।
বিহার এবং উত্তর প্রদেশে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ১২ টিরও বেশি ট্রেনের কোচে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে এই প্রকল্পে নিয়োগের সাথে রেলওয়ের কোনও সম্পর্কিতই ছিল না। এই ধরনের ঘটনা শেষ পর্যায়ে আরও বেড়েছে বলেই রেল আধিকারিকদের মতামত। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, দুর্নীতি বা আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ ট্রেনকে বেছে নিচ্ছে সহজতম টার্গেট হিসেবে। এর ফলে ট্রেনের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি যেমন হচ্ছে তেমনই ট্রেন বাতিল সহ অন্যান্য পরিষেবাগুলিতে ব্যাঘাতের কারণে রেলওয়ে বিশাল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা দেশে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনের ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত তিন বছরে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের প্রায় ৪,২৩৩ টি ঘটনা নথিভুক্ত আছে রেলের রিপোর্টে, একথাই জানান কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। গত শুক্রবার সংসদের উচ্চ কক্ষকে একটি লিখিত উত্তরে রেল ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। একটি সূত্রের খবর, আন্দোলন এবং অন্যান্য বাধার কারণে রেলওয়ে ২০১৯ সালে ১৫১ কোটি টাকা, ২০২০ সালে ৯০৪ কোটি টাকা, ২০২১ সালে ৬২ কোটি টাকা এবং ২০২২ সালে ২৬০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। অর্থাৎ সাধারণ হিসেবে ভারতীয় রেল গত চার বছরে প্রায় ১,৩৭৬ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আগ্রাসী আন্দোলনের সময় শুধুমাত্র ৬০ টি কোচ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ ‘গত কয়েক বছরে রেলওয়েকে সর্বদাই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। জনগণ বিভিন্ন কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে রেলের সাথের সম্পর্কযুক্ত নয়, এমন সব কারণে রেল ভাঙচুর করেছে। পরীক্ষার ফল প্রকাশ না হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা রেলের সম্পত্তির ক্ষতি করে। ছাগল বা গবাদি পশুর উপর দিয়ে ট্রেন গেলে মানুষজন ট্রেনের ক্ষতি করেছে এবং পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এমনকি যখন স্থানীয় প্রশাসন জনগণের দাবি বা অভিযোগ শোনেন না, তখনও রেলের সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।’ মন্তব্য করেন রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।