রাজস্থানের হলদিঘাটিতে রাজপুত রাজা মহারাণা প্রতাপের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল মোঘল সম্রাট আকবর। সেই লড়াইতে মহারাণা প্রচাপের জয় হয়েছিল বলে বিজেপি দাবি করে এসেছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। এই নিয়ে পাঠ্যক্রম বদলেছে। এই আবহে হলদিঘাটির উল্লেখ কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গলায়। ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, ১৫৭৬ সালের ১৮ জুন সেনাপতি মান সিংয়ের নেতৃত্বে চিতোরের মহারাণা প্রতাপের সঙ্গে যুদ্ধ হয় সম্রাট আকবরের বাহিনীর। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চিতোর ছেড়ে দক্ষিণের মেওয়ার পাহাড়ে আশ্রয় নেন মহারাণা প্রতাপ। তবে রাজনাথের কথায় ইঙ্গিত, 'আকবরকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মহারাণা প্রতাপ'।
কয়েক মাস হল, ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলে রাখা হয়েছে ছত্রপতি সাম্ভাজিনগর। সেই সাম্ভাজিনগরেই 'বীর শিরোমমণি মহারাণা প্রতাপ মহাসম্মেলনে' যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজনাথ সিং। সেই জনসভায় তিনি বলেন, 'এই জায়গার নাম বদলে সাম্ভাজিনগর রাখায় আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। মহারাণা প্রতাপ, ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ, ছত্রপতি সাম্ভাজি মহারাজের জীবনের অধ্যায়গুলিকে উলটে পালটে দেখা উচিত আমাদের। এঁদের জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে, মানুষের জীবনে আত্মসম্মানের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই।' এরপর রাজনাথ বলেন, 'হলদিঘাটির যুদ্ধে মহারানা প্রতাপ আশ্চর্য কাজ করে দেখিয়েছিলেন। আমি বিশদে যাব না... তবে আমি বলব, হালদিঘাটি হোক বা গালওয়ান, ভারত কখনও মাথা নত করেনি বা করবেও না। আমি এটা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই।'
উল্লেখ্য, এর আগে রাজস্থানে বিজেপি সরকার থাকাকালীন পাঠ্যক্রমে বদলে দেওয়া হয়েছিল হলদিঘাটির ঘটনাক্রমকে। দাবি করা হয়েছিল, হলদিঘাটিতে মহারাণা প্রতাপের জয় হয়েছিল। এরপর গত ২০২১ সালেও ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ রক্ততলাই ফলক সরিয়ে দিয়েছিল। হলদিঘাটের যুদ্ধের বর্ণনা ছিল সেই ফলকে। বিজেপির 'ইতিহাসের রাজনীতি'তে আকবর থেকে ঔরঙ্গজেবরা হলেন 'বিদেশি হানাদার'। এই আবহে ইতিহাসের পাঠ্যক্রম বদলেছে। বাদ পড়েছে মোঘল বংশের ইতিহাস। রাজনাথ সিং নিজের বক্তব্যে আকবরের হারের কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও তিনি এটিকে গালওয়ানের সঙ্গে তুলনা করেন। পূর্ব লাদাখেল গালওয়ানে বীরত্বের সঙ্গে লড়ে দেশের জন্য শহিদ হয়েছিলেন ২০ জন সেনা জওয়ান। তবে তাঁদের আত্মত্যাগের কারণে ভারতের জমি দখল করতে পারেনি চিন। তাই এই ঘটনার সঙ্গে হলদিঘাটের যুদ্ধের তুলনা টেনে রাজনাথ বোঝাতে চাইলেন, চিতোরকে মোঘলদের কাছে হারাননি মহারাণা প্রতাপ।