সনাতন ধর্মকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির সঙ্গে তুলনা করলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনের ছেলে উদয়নিধি। যে মন্তব্য ঘিরে তুমুল রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপির বক্তব্য, সনাতন ধর্মকে উপড়ে ফেলারও ডাক দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মন্ত্রী। যা আদতে ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষকে গণহত্যা করার ডাক দেওয়ার সামিল। উদয়নিধির বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে একটি সংগঠনও। তবে তাতে পাত্তা দিতে নারাজ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে। বরং নিজের অবস্থানে অনড় থেকে তিনি হুংকার দিয়েছেন যে দ্রাবিড়ীয় সংস্কৃতির মাটিতে যাতে সনাতন ধর্ম মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সারাজীবন লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার চেন্নাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে উদয়নিধি বলেন যে 'বিশেষ ভাষণ প্রদানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি এই আলোচনাচক্রের উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সনাতন-বিরোধী আলোচনাচক্রের পরিবর্তে আপনারা এই আলোচনাচক্রের নাম দিয়েছেন সনাতন বিলুপ্তি আলোচনাচক্র। যে সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছি।'
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'কয়েকটি বিষয়ের বিরোধিতা করা যায় না। সেগুলি শুধুমাত্র ধ্বংস করে ফেলতে হয়। আমরা ডেঙ্গি, মশা, ম্যালেরিয়া বা করোনার বিরোধিতা করতে পারি না। আমাদের সেগুলিকে ধ্বংস করে দিতে হবে। ঠিক সেভাবেই আমাদের সনাতনকে নির্মূল করতে হবে। সনাতনের বিরোধিতার পরিবর্তে সেটাকে পুরোপুরি নির্মূল করা উচিত। সংস্কৃত থেকে সনাতন শব্দ এসেছে। যা সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের ধারণার বিরোধী।'
উদয়নিধির সেই মন্তব্যের পরেই আসরে নামে বিজেপি। তাঁর বক্তব্যের ভিডিয়ো টুইট করে বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালবিয়া বলেন, 'সনাতন ধর্মকে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গির সঙ্গে তুলনা করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনের ছেলে এবং ডিএমকে সরকারের মন্ত্রী। তাঁর মতে, শুধু বিরোধিতা করলেই হবে না, সনাতন ধর্মকে উপড়ে ফেলতে হবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে উনি ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষের গণহত্যার ডাক দিচ্ছেন। যাঁরা সনাতন ধর্ম মেনে চলেন।'
সেইসঙ্গে সুকৌশলে বিষয়টির সঙ্গে কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোটকেও জুড়ে দেন মালবিয়া। বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান বলেন, ‘বিরোধী জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হল ডিএমকে এবং কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী। মুম্বইয়ের বৈঠকে (চলতি সপ্তাহে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হয়েছে) এটাই কি ঠিক করা হয়েছিল?’
রাজনৈতিক মহলের মতে, দক্ষিণ ভারতে বিজেপির অবস্থা তেমন ভালো নয়। কোনও রাজ্যেই ক্ষমতা নেই। বিশেষত তামিলনাড়ুতে বিজেপির অস্তিত্ব কার্যত টের পাওয়া যায় না। সেই পরিস্থিতিতে হিন্দুত্বের হাওয়া সম্ভবত সেখানে কাজে দেবে না। কিন্তু উদয়নিধির মন্তব্যকে বিরোধী জোটের সঙ্গে যুক্ত করে দেশের অন্যান্য প্রান্তের মানুষের কাছে কংগ্রেস, তৃণমল কংগ্রেসের মতো দলগুলিকে হিন্দু-বিরোধী তকমা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মালবিয়া। বিশেষত চলতি বছরের শেষের দিকে হিন্দি বলয়ে ভোট আছে। আর আগামী বছর লোকসভা ভোট হতে চলেছে। ফলে এক ঢিলে মালবিয়া একাধিক পাখি মারার চেষ্টা করেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
যদিও কোনও কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ করতে রাজি নন উদয়নিধি। একটি সংগঠনের তরফে মামলা করার হুঁশিয়ারি দেওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘করা হোক মামলা। যে কোনও আইনি লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে আমি প্রস্তুত আছি। এরকম গেরুয়াপন্থী লোকেদের হুমকির সামনে আমি মাথা নোয়াব না। আমরা পেরিয়ার, আন্না এবং কালাইগনারের দেখানো পথে চলি। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনের অভিভাবকত্বে আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার বজায় রাখতে চাই এবং সাম্যবাজী সমাজ গড়ে তুলতে চাই। আমি আজ বলেছি, আগামিকাল বলব, চিরকাল বলব যে দ্রাবিড়ীয় সংস্কৃতির মাটিতে যাতে সনাতন ধর্ম মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেটার জন্য আমাদের লড়াই এতটুকুও কমবে না।’