ভোট এলেই শুরু হয় প্রতিশ্রুতির বন্যা। সেই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির অপ্রাসঙ্গিক খয়রাতির প্রতিশ্রুতিতে রাশ টানতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা। যে দলগুলি সেই কাজ করবে, সেগুলির নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নেওয়া ও দলগুলির রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আর্জি জানানো হয়েছে। সেই মামলায় কেন্দ্র এবং নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ জারি করল শীর্ষ আদালত।
মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে মামলার শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ সিং জানান, দেশের মানুষের অর্থ ঝুঁকির মুখে আছে। এমন কয়েকটি রাজ্য আছে, যেগুলি ঋণের বোঝায় ডুবে আছে। সেই বোঝা এতটাই যে ব্যক্তিপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে তিন লাখ টাকা। তারপরও খয়রাতি করা হচ্ছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সেটা করছে। নখদন্তহীনভাবে নির্দেশিকা তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন।
সেই সওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে সেই প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না জানতে চান, আইনজীবী কি নির্দিষ্টভাবে কোনও নাম করতে চাইছেন না? হলফনামায় মাত্র দুটি নাম আছে। বিচারপতি হিমা কোহলি মন্তব্য করেন, আইনজীবী একটি নির্দিষ্ট অংশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছেন। শীর্ষ আদালতের সেই মন্তব্যের পরও খয়রাতির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার উদাহরণ হিসেবে পঞ্জাবের উল্লেখ করেন আইনীজীবী। তিনি বলেন, 'আপনি যদি প্রতি মহিলাকে ১,০০০ টাকা বা ২,০০০ টাকা দিতে চান, কে সেই টাকা জোগাবে? পঞ্জাবের দিকে দেখুন।'
এমনিতে ভোটের মরশুমে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী বিকাশ যে উদাহরণ তুলে ধরেছেন, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আম আদমি পার্টি। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, পঞ্জাবে ক্ষমতায় এলে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল মহিলাকে মাসে ১,০০০ টাকা দেওয়া হবে। প্রতিটি পরিবারের সর্বোচ্চ তিনজন সেই টাকা পাবেন। যদিও উদাহরণ হিসেবে পঞ্জাবের নাম করায় আইনজীবীকে পালটা প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘আমি কেন একটা রাজ্যের নাম করছেন?’
সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, সেই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে কী পদক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছেন মামলাকারীরা? প্রত্যুত্তরে আইনজীবী সিং বলেন, 'নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কিছু নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। যেমন - নিয়ম ভঙ্গ করলে রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হবে।' সঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিচারবিভাগ পুরো বিষয়টিতে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।’ মামলাকারীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত বাজেটের বাইরে চলে যায় খয়রাতির বাজেট। এটা দুর্নীতিমূলক বিষয় না হলেও অসাম্য তৈরি করে।' তারপর কেন্দ্র এবং নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত।