সাম্প্রতিককালে একাধিক ট্রেনে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই আবহে ট্রেনের অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছে রেল। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই টয়লেটে গিয়ে যাত্রীরা ধূমপান করেন। তা থেকে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এদিকে ট্রেনে যে 'ফায়ার ডিটেকশন অ্যালার্ম' বসানো ছিল, সেই সব যন্ত্র সিগারেটের ধোঁয়ায় বেজে উঠত না। এসি কামরার তাপমাত্রা যদি কোথাও ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে যায়, তবেই সেগুলি বেজে উঠত। তবে সেই প্রযুক্তি বদল করা হয়েছে। বদলে বসানো হয়েছে 'ফায়ার ডিটেকশন অ্যান্ড ব্রেক অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম।'
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় রেলের দূরপাল্লার ট্রেনগুলির মোট ১০৯২টি বাতানুকূল কামরার মধ্যে ৯৪৯টিতে বসানো হয়েছে 'ফায়ার ডিটেকশন অ্যান্ড ব্রেক অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম।' এই সিস্টেম বসানো এসি কামরার কোথাও যদি একটুও ধোঁয়া বের হয়, তাহলে সেন্সর সেটি সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলবে। এরপরই অ্যালার্ট জ্বালিয়ে দেবে এই সিস্টেম। এদিকে যদি ধোঁয়ার ঘনত্ব বেড়ে যায়, তাহলে কামরার ভিতরে অ্যালার্ট সিগন্যাল চালু করবে এই সিস্টেম। যদি তারপরও ধোঁয়ার ঘনত্ব বাড়তে থাকে তাহলে এক মিনিটের মধ্যে ঘোষণা শুরু হবে কামরায় আর ট্রেনটি ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়বে। জানা গিয়েছে, সিস্টেমের সেন্সর দেখেই ধোঁয়ার উৎস নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
গত অগস্টেই একটি ট্রেনে আগুন ধরে মৃত্যু হয়েছিল ১০ যাত্রীর। তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে সেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। এর আগে সম্প্রতি একই দিনে বেঙ্গালুরু এবং গোয়ালিয়রে দু'টি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। বেঙ্গালুরুর ঘটনায় উদয়ন এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন এবং বি১ ও বি২ কোচ দু'টিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। তবে দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এর আগে সম্প্রতি আপ কল্যাণী সীমান্ত লোকাল থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গিয়েছিল। ঘটনার জেরে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ট্রেন স্টেশনেই দাঁড়িয়ে ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর জানা যায়, শর্টসার্কিট থেকে এই আগুন লাগে। এদিকে গত জুলাই মাসেই আবার একটি বন্দে ভারত ট্রেনে আগুন ধরে গিয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ জুলাই ভোরে মধ্যপ্রদেশের কুরওয়াই কেথোরা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে। ভোপাল থেকে দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন টার্মিনালে যাচ্ছিল সেই ট্রেনটি। ট্রেনের সি১২ কোচের নীচে আগুন লাগে। তবে সেই ঘটনাতেও কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে এরও আগে সেকেন্দ্রাবাদগামী ফলকনুমা এক্সপ্রেসের একটি এসি কামরায় আগুন ধরে গিয়েছিল। ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। সেই ট্রেনটি হাওড়া থেকে ছেড়ে গিয়েছিল। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হয়। জানা যায়, ফলকনুমা এক্সপ্রেসটি প্রায় সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। গন্তব্যে পৌঁছতে বাকি আর কয়েকটা মিনিট। সেই সময় দেখা যায়, এসি কামরা থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই আবহে আতঙ্ক দেখা দেয় যাত্রীদের মধ্যে। অপরদিকে উপস্থিত বুদ্ধিতে মাঝ পথেই ট্রেন থামিয়ে দেন লোকো পাইলট। তখন সেখানেই প্রাণ ভয়ে লাফ দিয়ে নেমে পড়েন ট্রেনের যাত্রীরা। এদিকে সেই এসি কামরা ছাড়া অন্যান্য বগির যাত্রীরাও আতঙ্কে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছিলেন মাটিতে।