সম্প্রতি পড়ুয়াদের আন্দোলনে জেরবার হয়েছে সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়। এবার বুড়োদের আন্দোলনকে দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ করল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে যে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনওরকমের আন্দোলন বা ধর্মঘটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেনা। আর তাতে সাক্ষর না করলে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পদক্ষেপের পরেই সমালোচনায় সরব হয়েছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের বক্তব্য, বিশ্ব বিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র বিরোধী। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় তরফে জানানো হয়েছে, ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখার জন্য এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাউকে হেনস্থা করব না, ভর্তির সময় লিখিত কথা দিতে হবে পড়ুয়াদের, প্রস্তাব যাদবপুরে
পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপকে বৈষম্যমূলক আচরণ বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যদি কোনও পড়ুয়া এই মর্মে স্বাক্ষর না করেন তাহলে তাঁকে ভর্তি নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে আর কোনও বিকল্প থাকছে না। এটি গণতান্ত্রিক নীতির বিরুদ্ধে। একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ভালো সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের আওয়াজ তুলতে হয়। কিন্তু এরকম হলে পড়ুয়ারা না নিজেদের দাবিতে আওয়াজ তুলতে পারবে না। বিশ্ব বিদ্যালয়ে ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি চলছে। তার আগে এই নির্দেশিকা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৩ দফা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘আমি এতদ্বারা ঘোষণা করছি যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন বা ধর্মঘটে যোগ দেব না। ক্যাম্পাস অথবা হোস্টেল প্রাঙ্গনের পরিবেশের শান্তি ও প্রশান্তি নষ্ট করব না।’ শুধু তাই নয়, কোনও পড়ুয়া যে মানসিক সমস্যা বা কোনও গুরুতর রোগে ভুগছেন না সে কথাও লিখিতভাবে জানাতে হবে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, যে সমস্ত পড়ুয়ারা ভর্তি হচ্ছেন তাঁদের ইমেল মারফত এইনিয়ে একটি ফর্ম পাঠাচ্ছে বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সেই ফর্ম পূরণ করে বিশ্ব বিদ্যালয়ে সশরীরে জমা দিতে বলা হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদন করেছিলেন এক ছাত্র। তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রথম নির্দেশিকা পড়ি, তখন আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল কেন আমরা কোনও আন্দোলনে অংশ নিতে পারব না?’ তিনি জানান, ফি দেওয়ার পরেই তাঁকে বিশ্ব বিদ্যালয়ের তরফে এই ফর্ম দেওয়া হয় এবং তিনি বুঝতে পারেন যে এখানে ভর্তি হয়ে তিনি ভুল করেছেন। তাছাড়া কোনও ছাত্র মানসিক সমস্যায় ভুগছে কি না তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে এই নির্দেশিকায়। পড়ুয়াদের মতে, এটা বৈষম্যমূলক আচরণ।
প্রসঙ্গত, স্নাতকোত্তর স্তরে মাসিক বৃত্তি কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে গত বছর আন্দোলন করেছিলেন পড়ুয়াদের একাংশ। সেই আন্দোলনেই ‘ইন্ধন’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে তাদের সাসপেন্ড করে কর্তৃপক্ষ। তা নিয়েও জোরদার আন্দোলন চলে। তারপরেই এই পদক্ষেপ। উল্লেখ্য, সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক)-ভুক্ত দেশগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক। আগে দিল্লির চাণক্যপুরীতে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখন ময়দানগঢ়হিতে।