আব্রাহাম থমাস
দেশের প্রত্যেকটি থানায় থাকতে হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ঢোকা, বেরনোর পথ, লকআপ, অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তের সঙ্গে সাক্ষাৎকার-সহ থানার বিভিন্ন জায়গায় সেই সিসিটিভির বন্দোবস্ত করতে হবে। সেগুলি ‘নাইট ভিশন’ ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে। সেই সিসিটিভিতে এমন জায়গা (স্টোরেজ) থাকতে হবে, যাতে ১৮ মাস অডিয়ো ও ভিডিয়ো তাতে সঞ্চিত রাখা যায়।
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ছ'সপ্তাহের মধ্যে সেই নির্দেশ পালন করতে হবে। যদি সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ হয়ে পড়ে থাকে, তাহলে ‘স্টেশন হাউজ অফিসার’ (এসএইচও) সরাসরি সিসিটিভির দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন। সিসিটিভি নেটওয়ার্কের জন্য রাজ্যগুলিকে থানায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ইন্টারনেট পরিষেবার বন্দোবস্ত করতে হবে।
পঞ্জাবে পুলিশে হেফাজতে অত্যাচার সংক্রান্ত একটি মামলায় সেই রায় দেয় শীর্ষ আদালত। সেই মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালতকে ২০১৮ সালের এপ্রিলের একটি নির্দেশ জানানো হয়। যেখানে ফৌজদারি কার্যবিধি কোডের ১৬১ ধারার আওতায় অপরাধের স্থানে তদন্তের অডিয়ো-ভিডিয়ো রেকর্ডিং এবং অভিযুক্তের বক্তব্য রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রকে একটি নজরদারি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই রায়ের ভিত্তিতে কতদূর এগিয়েছে কেন্দ্র, তা গত ১৬ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে জানতে চায় শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সিসিটিভি বসানোর সুযোগের ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেয় এবং সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রিপোর্ট তলব করে। তার ভিত্তিতে ১৪ টি রাজ্য এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রিপোর্ট জমা পড়ে। বেঞ্চ জানতে পারে, প্রতিটি থানায় কতগুলি সিসিটিভি আছে, কতগুলি থানায় সিসিটিভি আছে, সিসিটিভির অবস্থান-সহ বিভিন্ন তথ্যের বিষয়ে খামতি আছে।
‘আদালত বন্ধু’ তথা আইনজীবী সিদ্ধার্থ দাভের পরামর্শ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত গ্রহণ করে বিচারপতি আর এফ নরিম্যানের নেতৃত্বধীন ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, প্রতিটি থানার প্রবেশ ও বেরনোর পথ, মূল গেট, সব লকআপ, পুরো হাঁটার জায়গা, লবি বা রিসেপশনের জায়গা, পুরো বারান্দা, ইন্সপেক্টর রুম, সাব-ইন্সপেক্টর রুম, লকআপ-রুমের বাইরের জায়গা, স্টেশন হল, থানার চত্বরের সামনের জায়গা, শৌচাগারের বাইরের জায়গা (ভিতরে নয়), ডিউটি অফিসারের রুম এবং থানার পিছনের দিকে সিসিটিভি থাকতে হবে। তার ফলে থানার কোনও অংশ সিসিটিভির আওতার বাইরে থাকবে না বলে জানিয়েছে বেঞ্চ।
শুধু থানা নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই), জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআই), এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি), ডিপার্টমেন্ট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)-সহ যে কোনও সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ এবং গ্রেফতারের ক্ষমতা আছে, সেগুলির কার্যালয়ের ক্ষেত্রেও সেই নির্দেশ মানতে হবে। বেঞ্চের নির্দেশ, ‘যে সমস্ত কার্যালয়ে এরকম জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং অভিযুক্তকে রাখা হবে, সেখানে থানার মতো সিসিটিভি বসাতে হবে।’
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রণয়নের দায়িত্ব থাকবে রাজ্য ও জেলাস্তরের নজরদারি কমিটির উপর। একইসঙ্গে সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ নিয়ে ‘স্টেশন হাউজ অফিসার’-এর অভিযোগ পূরণ করতে হবে সেই কমিটিকে। রাজ্যস্তরে সেই কমিটির শীর্ষে থাকবেন স্বরাষ্ট্র দফতরের সচিব বা অতিরিক্ত সচিব এবং জেলাস্তরে সেই দায়িত্ব পালন করবেন ডিভিশনাল কমিশনার। সিসিটিভির তথ্য দেখভাল, তথ্যের ব্যাকঅ্যাপ এবং ভ্রান্তি সারানোর দায়িত্বে থাকবেন ‘স্টেশন হাউজ অফিসার’। আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারি সেই মামলার আবার শুনানি হবে।