উদ্বোধন হল পদ্মা সেতুর। একদিকে যেমন এই সেতু নিয়ে বাঙালির গর্বের শেষ নেই, তেমনই অন্য দিকে এই সেতু নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠেছে সাধারণ মানুষের মনে। উত্তরপূর্ব ভারতের মতো বাংলাদেশের একটি বড় অংশ ভূমিকম্পপ্রবণ। আধিকারিকরা বলছেন,সে কথা মাথায় রেখেই সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। তারপরেই পদ্মা সেতু নিয়েও নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। এমন ভূমিকম্প বাংলাদেশে হলে কী হবে? ভেঙে পড়বে না তো পদ্মা সেতু? (আরও পড়ুন: ‘উত্তাল পদ্মার বুকে গৌরবের প্রতীক', টোল দিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হাসিনার)
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কথা মাথায় রেখেই এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যে সংস্থা জনএফকেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর,পার্ল হার্বার মেমোরিয়াল ব্রিজ,আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-সহ বহু বিখ্যাত স্থাপত্যের নকশা করেছে, তারাই পদ্মা সেতুর প্রকৌশলের দায়িত্বে রয়েছে।
তবে শেষ এখানেই নয়। এই সেতু নির্মাণে যে পদ্ধতির প্রয়োগ হয়েছে, তা এবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিলেবাসে রাখা হতে পারে। এমনই বলেছেন প্রধামনত্রী শেষ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবথেকে খরস্রোতা নদী হল অ্যামাজন। তার পরেই হল পদ্মা। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বিশ্বজুড়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঠ্যক্রমে সামিল করা যেতে পারে। কারণ এখানে এমন সব কাজ করা হয়েছে, যা বিশ্বে কোথাও হয়নি।’
তাঁর কথার পিছনে যথেষ্ট পরিমাণে যুক্তি রয়েছে। এমনই মত বিশেষজ্ঞদেরও। রিখটার স্কেলে প্রায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও এই সেতুর কিছু হবে না। এমনই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে বিয়ারিং বসানো হয়েছে প্রায় ৯৬ সেট। এই ধরনের বিয়ারিংকে বলা হয় ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং। এক একটির ওজন প্রায় ২৫ টনের মতো। এক সেট বিয়ারিং কমবেশি ১০ হাজার টন ওজন বহন করতে সক্ষম। আর এখানেই পদ্মা সেতু কৃতিত্ব। এর আগে সারা বিশ্বের আর কোনও সেতুতে এমন বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়নি। আ সেই কারণেই এটি বিশ্বের অন্য সব সেতুর থেকে এগিয়ে। এমনই মত বহু বিশেষজ্ঞরই।
এছাড়াও সরকারি হিসাব বলছে, পদ্মা সেতু তৈরিতে সিমেন্ট লেগেছে আড়াই লাখ টনের বেশি। পুরোটাই দেশে তৈরি সিমেন্ট। রড লেগেছে প্রায় ৯২ হাজার টন। দুটি দেশীয় ব্র্যান্ডের তৈরি রড ব্যবহৃত হয়েছে। বালি লেগেছে সাড়ে তিন লক্ষ টন। এই বালিও এসেছে সিলেট থেকে।
সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই সেতুর নক্সা তৈরির সময় ৪৭৫ বছরের ভূমিকম্পের রেকর্ড দেখা হয়েছিল। তাঁদের মতে,বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে অনেক বড় ভবন ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষতি হবে না।