দিল্লির ৯ বছরের দলিত কন্যার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়েছে গোটা দেশে। তথাকথিত এই ধর্ষণ কাণ্ডে তার মায়ের বয়ান প্রকাশ্যে এল।
নির্যাতিতার মা বলেন, ‘ওরা আমাদের বাড়িতে গিয়ে ঘুমোতে বলেছিল। আরও বলেছিল যে, মৃত্যুর শোক না করতে। শুধু তাই নয়, তারা হুমকি দিয়েছিল, যদি আমরা পুলিশে ফোন করি, তাহলে তারা মেয়ের অঙ্গ চুরি করে নেবে। কিন্তু আমি চুপ থাকতে পারিনি। বাড়ি ফিরে এসেই কান্নায় ভেঙে পড়ি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শ্মশানের অভিযুক্ত পুরোহিত রাধেশ্যাম আমার মেয়েকে মাঝের মধ্যে চা বানিয়ে আনতে বলত বা কোনওদিন তাকে জল আনতেও পাঠাত।’
নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘পণ্ডিতজির মনে কী ছিল, তা জানার কোনও উপায় ছিল না। ঘটনার ৩০ মিনিট কেটে যাওয়ার পর মেয়েকে না ফিরতে দেখে শ্মশানের দিকে খুঁজতে বের হন। সেখানে গিয়ে দেখেন অভিযুক্তই পুরোহিত ঘটনাস্থলে রয়েছে, আশেপাশে কোথাও তাঁদের মেয়ে নেই।’ এফআইআরে নির্যাতিতার মা দাবি করেন যে, অভিযুক্ত পুরোহিতই তাঁকে শ্মশানে নিয়ে গিয়েছিল। যেতে যেতেই তাঁকে বলেছিল যে, তাঁর মেয়ে কুলারে জল নিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে।
নির্যাতিতার মা বলেন, ‘শ্মশানে গিয়ে দেখি আমার মেয়েকে একটি বেঞ্চে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার হাত-পা ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় রয়েছে। মেয়ের চোখ বন্ধ ছিল। তার ঠোঁট কালো হয়ে গিয়েছিল। মেয়ের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। শুধু তাই নয়, তার মুখ থেকে জল বের হচ্ছিল। কিন্তু তার কাপড়ে কোনও কাদা বা ময়লার দাগ ছিল না।’
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ-পশ্চিম) ইঙ্গিত প্রতাপ সিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রাত ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে একটি ফোন কলের মাধ্যমে তাঁরা ঘটনার খবর পান। ডিএসপির জারি করা প্রথম বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, পিসিআরে যে ফোন কল এসেছিল সেখানে দাবি করা হয়েছিল, একটি নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করার পর তার দেহ দাহ করা হয়েছে। কিন্তু দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট থানায় এফআইআর নথিভুক্ত করার সময় ধর্ষণ কিংবা হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়নি। এফআইআরে ধর্ষণের কথা উল্লেখ না করা প্রসঙ্গে ডিএসপি বলেন, ‘পিসিআরের ফোন কলের ভিত্তিতে এই ধরনের মামলা নথিভুক্ত করা হয় না। মেয়েটির মা এফআইআরের বিবৃতিতে ধর্ষণ ও হত্যার কথা উল্লেখ করেননি।’
পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ওই চারজন সন্দেহভাজনকে ধরে মারধর করে। তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্তদের মধ্যে একজন স্বীকার করেছে যে, এই ঘটনার পরিকল্পনার পিছনে অভিযুক্ত পুরোহিত রাধেশ্যাম দায়ী।’ ঘটনাস্থল পৌঁছে ওই চারজন অভিযুক্তকে ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
তবে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন, পকসো ও এসসি-এসটি ধারায় মামলা রুজু করে। একইসঙ্গে এসসি-এসটি কমিশনের সামনে মায়ের বয়ান রেকর্ড করা হয়।মৃত শিশুটির ময়নাতদন্তের জন্য দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসককে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু বুধবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত অসম্পূর্ণ হয়ে ফেরত আসে। কারণ, তার অগ্নিদগ্ধ দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছিল।
এপ্রসঙ্গে ডিসিপি বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ ছিল। সে কারণে মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, শরীরের খুব কম অংশই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।’