দ্বিতীয় দিনই আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। মনে হচ্ছিল, তৃতীয় দিনেই শেষ হয়ে যাবে টেস্ট ম্য়াচটি। আয়ারল্যান্ডের সামনে ইনিংসে হারের ভ্রুকুটি ঝুলছিল। কিন্তু সেটা হতে দেননি আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা। শাকিব আল হাসানদের আশায় জল ঢেলে দেন আইরিশরা। লরকান টাকার এবং অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইনদের দুরন্ত লড়াই সব অঙ্কের হিসেব এলোমেলো করে দেয়।
এমনিতেই আয়ারল্যান্ডের পক্ষে হার বাঁচানো সম্ভব ছিল না। তবে তারা যে লড়াই করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে, তার জন্য বাহবা দিতেই হবে। শাকিব আল হাসানরা ভেবেই নিয়েছিলেন, অনায়াসে ম্যাচ জিতবেন। আয়ারল্যান্ড যে এ ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, অনুমান করতে পারেনি বাংলাদেশ। মীরপুর টেস্ট তাই গড়াল চতুর্থ দিনেও। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামতে হল বাংলাদেশকে। ১৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তারা ৩ উইকেটও হারিয়ে বসে থাকল।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত সাত উইকেটে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ তিন বছর পর ঘরের মাঠ টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরেই জিম্বাবোয়েকে হারিয়েছিল তারা। আর দেশের বাইরে বাংলাদেশ শেষ বার টেস্ট জিতেছিল ২০২২ সালের শুরুতে, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে রান তাড়া করে পঞ্চমবার টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। এই সংস্করণে এটি তাদের ১৭তম জয়। পাশাপাশি আয়ারল্যান্ড আবার টানা চারটি টেস্টে হারল।
আরও পড়ুন: সৌরভ থেকে রানা, প্রজন্ম বদলালেও অটুট RCB-র বিরুদ্ধে নাইটদের বড় জয়ের পরম্পরা
১৩১ রানে এগিয়ে থেকে, শুক্রবার সকালে ব্যাট করতে নামে আয়ারল্যান্ড। তবে ৯ ওভার ব্যাটিং করলেও আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে মাত্র ৬ রান যোগ করতে পারে। আর এর মধ্যেই শেষ ২ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। দু'টি উইকেটই নেন ইবাদত হোসেন। ৭২ রান করে বোল্ড হন অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইন। আর গ্রাহাম হিউম ফেরেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নিয়েই ম্যাচ শেষ করতে হয় তাই তাইজুল ইসলামকে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৪ উইকেট নেন।
প্রসঙ্গত, টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষে আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের রান ছিল ৪ উইকেটে ২৭। তৃতীয় দিনের শেষে আয়ারল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ২৮৬ রান তোলে। সুতরাং, সারা দিনে ৪টি উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান সংগ্রহ করে তারা। অভিষেক টেস্টে দুর্দান্ত শতরান করেন লরকান টাকার। তিনি ১৪টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ১৬২ বলে ১০৮ রান করে মাঠ ছাড়েন।
হ্যারি টেক্টরের ব্যাট থেকে এল ৫৬ রানের ইনিংস। ৭টি চার এবং ১টি ছয় মারলেন তিনি। তৃতীয় দিনের শেষে ৭১ রানে অপরাজিত রয়েছেন ম্যাকব্রেইন। ৮টি চার এবং ১টি ছয় মেরেছেন তিনি। তিন আইরিশ ব্যাটারের সামনে অনেকটাই অসহায় দেখিয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের।
যাইহোক ১৩৮ রানের লক্ষ্য রান তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন লিটন দাস। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের পর প্রথম বার। আয়ারল্যান্ড স্পিনারদের সামলাতে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের ব্যাপার তো ছিলই। দু'জনের শুরুর ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে—এমন জুটির পেছনে আছে আক্রমণাত্মক মানসিকতাও।
আরও পড়ুন: KKR জার্সিতে যত ভালো খেলবে,WC-এ খেলার সম্ভাবনা বাড়বে- আশায় রয়েছেন শার্দুলের কোচ
দ্বিতীয় বলেই মার্ক এডেয়ারকে ড্রাইভ করে চার মেরে শুরু করেন তামিম। লিটন মুখোমুখি প্রথম বলেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছক্কা মারেন ম্যাকব্রেইনকে, ঠিক পরের বলেই কাট করে মারেন আরও একটি চার। ৪ ওভারেই ২৭ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।
ওপেনিং জুটি ভাঙে লিটনের অদ্ভুত আউটে। এডেয়ারের শর্ট বলে পুল শটটা একটু আগেই খেলে ফেলেন লিটন, মিস করেন সেটি। বল তাঁর হেলমেট থেকে এসে লাগে ব্যাটে, এর পর ভাঙে স্টাম্প। ১৯ বলে ২৩ রান করে অবার আউট হন লিটন।
দারুণ একটি ড্রাইভে চার মেরে শুরু করলেও নাজমুল অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেননি। ম্যাকব্রেইনের বলে স্লিপে অ্যান্ডি বলবার্নির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দ্রুত ২ উইকেট হারালেও প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিম নেমে অবশ্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই করেন। মুশফিকুরই দায়িত্ব নিয়ে জেতার পথ মসৃণ করেন বাংলাদেশের।
মধ্যাহ্ন-বিরতিতে প্রয়োজন ছিল ৪৯ রান। বিরতির পর অবশ্য ছন্দপতন হয় তামিমের। লেগ স্পিনার হোয়াইটের বলে ক্যাচ তোলেন তামিম। ৬৫ বলে ৩১ রান করে তিনি সাজঘরে ফেরেন। এর পর অবশ্য আর উইকেট পড়েনি বাংলাদেশের। ২৭.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৩৮ রান করে ম্যাচ পকেটে পুড়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ম্যাচ জেতেন শাকিবরা।
আয়ারল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ২১৪ রান করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৩৬৯ রান তোলে। প্রথম ইনিংসের নিরিখে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দফায় ব্যাট করতে নেমেছিল আয়ারল্যান্ড।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।