গুরপ্রীত সিং সান্ধু। ভারতের জাতীয় দলের গোলরক্ষক। তবে তিনি এখন শুধু গোলকিপার নন। ভারতীয় দল থেকে শুরু করে ফুটবলপ্রেমীদের নায়ক তিনি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন তিনি। গুরপ্রীত নিজের এই পারফরম্যান্সকে সেরা অংশ বা মুহূর্ত বলেও মেনে নিচ্ছেন। ভারতের ফুটবল প্রেমীরা এখনও ম্যাচ জেতার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে ছুটি নেই গুরপ্রীতের। আজ বৃহস্পতিবার প্রশিক্ষণ নিতে নরওয়ে উড়ে যাচ্ছেন তিনি। ভারতকে সাফ চ্যাম্পিয়ন করার মাত্র ৪৮ ঘন্টা পরে সান্ধু তাঁর পূর্ববর্তী ক্লাব স্ট্যাবেক এফসিতে অফ-সিজন প্রশিক্ষণের জন্য নরওয়েতে যাচ্ছেন। এই সাফ কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি আসন্ন এশিয়ান কাপের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চান তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন ভারতীয় দলের গোলরক্ষক।
প্রথমেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় ভারতীয় দল এখনও পর্যন্ত এই বছরে কোনও ম্যাচ হারেনি এর পিছনে রহস্য কি? এর উত্তরে তিনি বলেন, 'এটা অনেক পরিশ্রম এবং পরিকল্পনার ফলে হয়েছে। একটি শিবিরের দীর্ঘদিন ধরে সকলে একসঙ্গে থাকা খেলা এবং একে অপরের বিষয়ে জানা অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার আগে অনেক ফুটবলার মানসিকভাবে দুর্বল ছিল, তারা এখন বেশ শক্তিশালী। সুনীল ভাই, আমি, অমরিন্দর সন্দেশ এবং প্রীতম ছাড়া অনেকেই এখনও পর্যন্ত ৫টি থেকে ২০টি ম্যাচে খেলেছে। ওরা সঠিক সময়েই ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য আমাদের এই জয়ের ফলে যাতে মাথা ঘুরে না যায় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।'
এরপর তাকে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে একটি করে পেনাল্টি বাঁচানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'আমি আগে বিপক্ষ ফুটবলারদের মুখোমুখি হইনি। তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতাম না। পেনাল্টি বাঁচানোর ক্ষেত্রে সবটাই ভিতর থেকে এসেছে। আমার মনের ভিতর সবসময় কাজ করেছিল ঠিক ভাবে থাকা আমি ঠিক করেছিলাম ওরা কোন দিকে মারতে চলেছে, সেই সিদ্ধান্ত আমি নেব না। অনেক ফুটবলার পেনাল্টি নিতে গিয়ে প্রথমে দেখে গোলকিপার কোন দিকে ঝাঁপাচ্ছে, তারপরে বিপরীত দিকে বল মারে। আমার লক্ষ্য ছিল পায়ের দিকে।'
গুরপ্রীত আরও বলেন, 'এটা শুধু আমিই বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা আমাকে নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। ওরা যেহেতু ডান পায়ের ফুটবলার তাই বাঁদিকেই শট মারবে বলে ভেবেছিলাম। তাই প্রথম পেনাল্টিতে ওরা বাঁদিকেই মারে। শেষ পেনাল্টিতে বিপক্ষ অধিনায়ক খালেদ হাজিয়া শট মারতে আসে। ও একটুও স্মার্টনেস দেখাবে সেটা ভেবেছিলাম। বল মারতে এসে ও নড়াচড়া করছিল তাই আমিও সেটা করি। আমি ওকে ডানদিকে ঝাঁপাবো বলে বিশ্বাস করাই। কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত বাঁদিকে ঝাঁপাই।'
এর আগে ভারত কোনও দিন লেবালনকে হারাতে পারেনি। ২০১০ সালে কুয়েতের কাছেও বিশ্রী ভাবে হেরেছে ভারতীয় ফুটবল দল। কিন্তু এইবার দুই দলকেই হারিয়ে তারা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, 'এটা সবই খেলার পরিকল্পনার অংশ। সেই সময়ের ফুটবলারা হয়তো আজকের মতো শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিল না। শারীরিক ভাষাতে বোঝাতে হয় যে বিপক্ষ দলকে আমরা ভয় পাই না। বাকিটা খেলার পরিকল্পনার অংশ। দুর্ভাগ্যবশত, এই পর্যায়ে পৌঁছতে সময় লেগেছে কিন্তু এর কৃতিত্ব কোচিং স্টাফ এবং ছেলেদের, যারা ক্যাম্পে বুঝতে পেরেছিল যে এটিই আমাদের করতে হবে।'
এর পরের প্রশ্ন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি এখন নরওয়ে যাচ্ছেন সেখান থেকে কি উন্নতি করবেন বলে আশা করছেন। তিনি জানান, 'আমি নিজেকে আরও নতুন করে খুঁজে পেতে চাই। অন্যান্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলা সবচেয়ে ভালো প্রশিক্ষণ বলে আমি মনে করি। অফ-সিজনে বসে না থেকে প্র্যাকটিস করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।' এশিয়ান কাপে আরও কি কি উন্নতি করা উচিত বলে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, 'প্রথমত, ধারাবাহিকতা। এটা নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন পিছিয়ে না পড়ি। আমি আশা করি সবাই শক্তিশালী থাকবে। নিজেদের নিয়ে কাজ করবে না। জানুয়ারিতে এশিয়ান কাপের জন্য দল ইনজুরি মুক্ত থাকবে। আশা করি দল প্র্যাকটিসের জন্য অনেক বেশি সময় পাবে।'
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।