পেপ গুয়ার্দিওলার হাত ধরে যেন সাফল্যের একটি বৃত্ত পূরণ করে ফেলল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। পেপের হাত ধরে প্রথম বার উয়েফা সুপার কাপ জিতল সিটি। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের কারাইসকাকিস স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ম্যাচ ১–১ ছিল। প্রথমার্ধে সেভিয়াকে এগিয়ে দেন ইউসেফ এন নেসিরি। দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরান সিটির কোল পালমার। উয়েফার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের পরিবর্তে এর পর সরাসরি খেলা টাইব্রেকারে গড়ায়। সেখানে ৫–৪ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ক'দিন আগে আর্সেনালের বিপক্ষে কমিউনিটি শিল্ডে টাইব্রেকারেই হারতে হয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে। কিন্তু সেই যন্ত্রণায় এদিন কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়ল।
টাইব্রেকারে সিটির হয়ে গোল করেন আর্লিং হল্যান্ড, জুলিয়ান আলভারেজ, মাতেও কোভাসিচ, জ্যাক গ্রিলিশ এবং অধিনায়ক কাইল ওয়াকার। সেভিয়ার হয়ে প্রথম চারটি শটে সফল হন লুকাস ওকাম্পোস, রাফা মির, ইভান রাকিতিচ এবং গঞ্জালো মন্তিয়েল। কিন্তু শেষ শট নেওয়া গুলেদি ব্যর্থ হন। উঁচুতে নেওয়া তাঁর কিক বারে লেগে ফিরতেই উৎসবে মেতে ওঠে পেপের দল।
রোমাঞ্চকর এই জয়ের হাত ধরে সিটির কোচ হিসেবে শুধু সম্ভাব্য সব শিরোপাই জেতেননি গুয়ার্দিওলা, কার্লো আন্সেলোত্তির গড়া রেকর্ডেও ভাগ বসালেন তিনি। আন্সেলোত্তির পর দ্বিতীয় কোচ হিসেবে চার বার উয়েফা সুপার কাপ জিতলেন পেপ। এখানেই শে নয়। আরও একটি দুন্ত নজির গড়লেন তিনি। প্রথম কোচ হিসেবে ৩টি ভিন্ন ক্লাবকে তিনি এই ট্রফির স্বাদ দিলেন। সিটির আগে বায়ার্ন মিউনিখ (২০১৩) এবং বার্সেলোনাকে (২০০৯ ও ২০১১) এই শিরোপা জিতিয়েছিলেন গুয়ার্দিওলা।
যদি ভারতীয় সময়ে বুধবার মাঝরাতে পেপের দলকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল সেভিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল সেভিয়াকে। একেই গ্রিসের তাপমাত্রা এখন বেশ বেশি। কয়েক দিন আগেই ভয়াবহ দাবানাল ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রিসের বেশ কয়েকটি এলাকায়। যার জেরে তাপমাত্রার পারদ ৪৪° সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে ম্যাচের দিন তুলনায় কমই ছিল তাপমাত্রার পারদ। ২৭° সেলসিয়াস ছিল। তাতেও ঘেমে ঝোল হতে হয়েছিল প্লেয়ারদের। ম্যাচের ২৫ মিনিটেই দেওয়া হয়েছিল প্রথম কুলিং ব্রেক। গরমের কারণেই সিটি প্রথম দিকে নিজেদের খাপ খুলতে পারছিল না। তবে কুলিং ব্রেকে কোচের কাছে তীব্র বকুনি খেতে হল। তবে সেটা খুব বেশি কাজে আসেনি। কুলিং ব্রেকের ঠিক পরেই এন নেসিরি এগিয়ে দেন সেভিয়াকে।
সেভিয়ার এই গোলের উৎস ছিলেন তাদের গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু। তাঁর লম্বা থ্রোতে বল পেয়ে যান ওকাম্পোস। তিনি বল বাড়ান তাঁর বাঁ পাশে থাকা মার্কোস আকুনিয়াকে। আর্জেন্তিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা আকুনিয়া দারুণ উচ্চতায় ক্রস বাড়ান এন নেসিরির উদ্দেশে। মরক্কোর এই স্ট্রাইকারকে কড়া মার্কিংয়েই রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে আটকানো যায়নি। জোরালো হেডে সেভিয়াকে এগিয়ে দেন এন নেসিরি। প্রথমার্ধে গোলশোধ করতে পারেননি পেপের ছেলেরা। ১-০ এগিয়ে ছিল সেভিয়া।
আরও পড়ুন: কঠিন বাস্তবের সামনে ফের স্বপ্ন বিসর্জন, চাকরির জন্য বাংলা ছাড়লেন দুই তারকা ফুটবলার
বিরতিতে পেপের তীব্র চোখ রাঙানির পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে ম্যঞ্চেস্টার সিটি। দলের প্রায় সবাই মিলেই আক্রমণে উঠে আসে। আর ফাঁকা রক্ষণ পেয়ে পাল্টা আক্রমণে উঠে আরও একবার প্রায় বিপদ ঘটিয়ে ফেলেছিলেন নেসিরি। ওকাম্পোস বল পেয়ে অসাধারণ পাস বাড়ান নেসিরিকে। তবে সহজতম সুযোগটি এবার নষ্ট করেন নেসিরি। সিটি যদি ২-০ পিছিয়ে পড়ত, তবে তাদের কপালে দুঃখ ছিল।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ম্যাচের ৬৩ মিনিটে কোল পালমারের গোলে সমতায় ফেরে গুয়ার্দিওলার দল। পালমারকে ক্রস বাড়িয়েছিলেন রড্রি। হতচকিত হয়ে গোলপোস্ট ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে এসেছিলেন সেভিয়ার কিপার ইয়াসিন বুনু। সেই সুযোগে পালমার ডি-বক্সের ডান পাশ থেকে নেওয়া নিখুঁত হেডে জালে জড়ান। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব–২১ দলের হয়ে ইউরো জেতা এই তরুণ ক'দিন আগে কমিউনিটি শিল্ডেও গোল করেছিলেন। সেই দিন অবশ্য তাঁর গোলটা বৃথা গেলেও, এবার সেটা হয়নি। এর পর নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ থাকলে টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। আর তাতেই পেনাল্টি আটকে বাজিমাত করেন এদেরসন।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।