ইতিহাস গড়ে ফেললেন মনীষা কল্যাণ। অ্যাপোলন লেডিস এফসি-এর হয়ে দুরন্ত একটি গোলে করে নজির গড়ে ফেললেন মনীষা। প্রথম ভারতীয় হিসেবে উয়েফা মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে গোল করে নজির গড়লেন ভারতের তরুণী! বিদেশের মঞ্চে একেবারে ভারতীয় মহিলা ফুটবলের রেনেসাঁস ঘটালেন পঞ্জাব কন্যা।
ডব্লিউসিএল কোয়ালিফায়ারে অ্যাপোলন লেডিসের হয়ে সামগ্রেলোর বিরুদ্ধে পরিবর্তে নেমে একটি বিস্ময়কর স্ট্রাইক করেছেন ২১ বছরের মনীষা কল্যাণ। সেই সঙ্গেই তিনি গড়ে ফেলেছেন ইতিহাস।
মূলত ভারতের চণ্ডীগড় থেকে মনীষার এই অসাধারণ কৃতিত্বের যাত্রা শুরু। কঠোর পরিশ্রম এবং খেলাধুলার প্রতি দৃঢ় ভালোবাসার কারণেই বিদেশের মঞ্চে তাঁর জায়গা করে নেওয়া। মাঠে তাঁর ব্যতিক্রমী প্রতিভা ভারতের মহিলা জাতীয় দলে মনীষাকে জায়গা করে দেয়। ২০২২ সালে সাইপ্রাসের ফার্স্ট ডিভিশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একটি বিশিষ্ট ক্লাব অ্যাপোলনের সঙ্গে তিনি চুক্তি করেন। এখন সেখানেই চুটিয়ে ফুটবল খেলছেন মনীষা।
সামগ্রেলোর বিরুদ্ধে ৩-০ জয় পায় অ্যাপোলন। ম্যাচের শুরুতেই ৯ মিনিটের মাথায় ক্যাটলিন রোজ ব্রিঙ্কম্যান ১-০ করেন। ৭১ মিনিটে দুরন্ত গোল করেন মনীষা। ৮৭ মিনিটে তিন নম্বর গোলটি করেন জোয়ানা ফিলিপা অলিভেইরা। মনীষা বক্সের লাইন থেকে বল ভাসিয়ে সোজাসুজি গোলে ঢুকিয়ে দেন। নিঃসন্দেহে গোলটি ছিল দৃষ্টিনন্দন।
প্রসঙ্গত, মনীষা ২০২০-২১ মরশুমে ফেডারেশনের মহিলা উদীয়মান ফুটবলার নির্বাচিত হন। ২০২২-২৩ সালে মরশুমে তিনি ফেডারেশনের সেরা মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন।
উয়েফা মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মনীষা কল্যাণের যাত্রা পথটা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক হয়ে উঠছে। এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে, তিনি গোল করে সকলকে চমকে দিয়েছেন। সুনীল ছেত্রী, ভাইচুং ভুটিয়াদেরও এমন দুরন্ত নজির নেই। থাকবেই বা করে! কারণ মেয়ে বা পুরুষ মিলিয়ে মনীষাই প্রথম ভারতীয় ফুটবলার, যিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলছেন।
ভারতীয় মহিলা ফুটবলে বিপ্লব এনে দিয়েছেন মনীষা। গ্র্যান্ড ইউরোপীয় মঞ্চে তাঁর উপস্থিতিটুকুই ছিল ভারতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সেখানে গোল করে ইতিহাস লিখেছেন তিনি।
৬ সেপ্টেম্বর মেসিডোনিয়ান দল লুবোটেনের বিরুদ্ধে তিনটি গোলে অ্যাসিস্ট করে নজির গড়েছিলেন। ম্যাচটি তাঁর দল ৯-০ জিতেছিল। এদিন নিজেই গোল করে রেকর্ড গড়ে ফেললেন।
পঞ্জাবের হোসিয়ারপুর জেলার মুগোওয়াল গ্রামে জন্ম মনীষার। ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন বলে গ্রামবাসীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। জারি হয়েছিল ফুটবল না খেলার ফতোয়াও। দিনের পর দিন কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল মনীষার পরিবারকে। কিন্তু হার মানেননি তিনি। অপমানের যন্ত্রণা নিয়েই স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন বাবা আর মাকেও।
মনীষার ফুটবলার হয়ে ওঠার কাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। শৈশবে স্বপ্ন ছিল অ্যাথলিট হওয়ার। ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়তেন। পাশাপাশি বাস্কেটবলও খেলতেন। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার পরেই বদলে যায় তাঁর জীবনের লক্ষ্য। স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার। তিনি কিছুটা জোর করেই মনীষাকে জেলা ফুটবল দলের ট্রায়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন। অসাধারণ খেলে জেলা দলে নির্বাচিত হয়ে এত আনন্দ হয়েছিল তাঁর যে, মাঠে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ফুটবলার হওয়ার। সেই থেকে শুরু। অনেক বাধা পেরিয়ে এখন বিশ্ব মঞ্চেও চমকে দিচ্ছেন মনীষা।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।