চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে মাথা নীচু করে মাঠ ছাড়তে হল ইউনাইটেডকে। তবে ইংল্যান্ডের অন্য দল আর্সেনাল অবশ্য বড় জয় পেল। তারা পিএসভি-কে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিল। এদিকে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগের মুহূর্তে বেলিংহ্যামের গোলে জিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রিয়াল মাদ্রিদ।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম বায়ার্ন মিউনিখ
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্রুপের প্রথম ম্যাচেই মুখ থুবড়ে পড়ল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে তারা ৩-৪ গোলে হেরে বসে থাকল। বায়ার্নের ব্যবধান আরও বাড়তেই পারত। কোনও সময়েই মনে হয়নি এই ম্যাচ জিততে পারে ম্যান ইউনাইটেড। বায়ার্ন প্রথম গোল দেওয়ার আগে পর্যন্ত কিছুটা লড়াই হচ্ছিল। কিন্তু জার্মানির দলটির কাছে অল্প সময়ের মধ্যে পরপর গোল খেয়ে চাপে পড়ে যায় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। প্রথম ২৭ মিনিটে গোল হজম না করা ইউনাইটেড, পরের ২৭ মিনিটেই তিন গোলহজম করে বসে। পরে আরও একটি। ইউনাইটেড তিন গোল করলেও শেষ পর্যন্ত ৩-৪ হেরেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। এটি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ইউনাইটেডের টানা তৃতীয় হার। ইংলিশ ক্লাবটি ম্যাচে তিন বা তার বেশি গোলও হজম করল টানা তিন ম্যাচে, যা ইউনাইটেড ইতিহাসে ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত ইউনাইটেড। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের কাছ থেকে নেওয়া শট দারুণ তৎপরতায় রুখে দেন বায়ার্ন গোলরক্ষক সেন উলরিয়েখ। ম্যাচের প্রথম আধ ঘণ্টায় ইউনাইটেড একটিই ভালো আক্রমণ করেছিল। এদিকে বায়ার্ন বারবার হানা দিচ্ছিল ইউনাইটেড রক্ষণে। তবে আন্দ্রে ওনানা ভুল না করলে হয়তো বায়ার্নকে প্রথম গোলের জন্য বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হতো। ২৮ মিনিটে বায়ার্ন এগিয়ে যায় ইউনাইটেড গোলরক্ষক ওনানার ভুলের সুযোগ নিয়ে। কেনের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন সানে। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ওনানা বলের নাগালও পান, কিন্তু তারকা গোলরক্ষক তা নিয়ন্ত্রণে তো নিতে পারেনইনি, উল্টে হাত ফস্কে বল নিজেই গোলে ঠেলে দেন। ইউনাইটেডের গোলমুখ খোলার পর উজ্জীবিত বায়ার্ন চার মিনিট বাদে দ্বিতীয় গোলও পেয়ে যায়। বল নিয়ে হুহু করে বক্সে ঢুকে পড়েন জামাল মুসিয়ালা। তবে তাঁকে ইউনাইটেডের ডিফেন্ডাররা ঘিরে ধরলে তিনি বল বাড়ান ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকে জিনাব্রির দিকে। অরক্ষিত জার্মান ফরোয়ার্ড বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি।
ম্যাচের ৫৩ মিনিটে কেন আর ৯২ মিনিটে ম্যাথিস তেল বায়ার্নের হয়ে বাকি দুই গোল করেন। এরিকসেনের হ্যান্ডবলের সূত্রে পাওয়া পেনাল্টিতে বায়ার্নের হয়ে নিজের পঞ্চম গোলটি করেন কেন। এদিকে ইউনাইটেডের তিনটি গোলই এসেছে পিছিয়ে থাকা অবস্থায়। প্রথমটি ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা অবস্থাতে ৪৯ মিনিটে ব্য়বধান কমান রাসমাস। ২০ বছর ড্যানিশ ফরোয়ার্ড রাশফোর্ডের কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ পায়ের শট মারেন। কিম মিন-জায়ের পায়ে বলটি লেগে গতিপথ বদলে জালে জড়ায়। অন্য দু'টি গোল কাসেমিরোর, একটি ৮৮ মিনিটে, আর একটি দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমের পঞ্চম মিনিটে।
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম নাপোলি
ম্যাচের একেবারে শেষে ইনজুরি টাইমে বেলিংহ্যামের গোলে মানরক্ষা করল রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল যখন গোল হাতড়েও পায় না, তখন যেন বেলিংহ্যাম বারবার ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এটা যেন একটা অভ্যেস হয়ে উঠেছে। সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে গোল করেছেন ৮১ মিনিটে, হেতাফের বিপক্ষে ৯৫ মিনিটে এবং ইউনিয়ন বার্লিনের বিপক্ষে গোল করলেন ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে। ম্যাচের বয়স তখন ৯৪ মিনিট। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি হয়ে নামা ভালভার্দের শট বক্সে জটলার মধ্যে ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগেছিল। আর সেই বল ঠেকাতে ডাইভ দিয়েছিলেন ইউনিয়ন বার্লিনের গোলকিপার ফ্রেদেরিক রোনো। এই সুযোগে ফাঁকা পোস্টে গোল করেন বেলিংহ্যাম। এর আগে রিয়ালের হয়ে লা লিগা অভিষেকে গোল পেয়েছিলেন, এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও বাদ গেলেন না। তবে ঘরের মাঠে অনামী দল ইউনিয়ন বার্লিনের বিরুদ্ধে গোল করতে সংযোজিত সময়ের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নদের।
ম্যাচের প্রথমার্ধে কোনও দলই গোলের খুব বেশি সুযোগ পায়নি। ম্যাচের শুরুতে হোসেলুর হেড অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। এর পর আর কোনও সুযোগ পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। ইউনিয়ন বার্লিন উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ছবিটা বদলে যায়। ঘরের মাঠে জয়ের লক্ষ্যে আক্রমণে ঝাঁপায় রিয়াল মাদ্রিদ। রডরিগো এবং হোসেলুর চেষ্টা বারে লেগে ফিরে আসে। সেই সময় মনে হচ্ছিল ঘরের মাঠে হয়তো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সফলতম ক্লাবকে পয়েন্ট নষ্ট করতে হবে। তবে সংযোজিত সময়ের চতুর্থ মিনিটে গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩ পয়েন্ট এনে দেন বেলিংহ্যাম। এই ম্যাচে ইউনিয়ন বার্লিনের গোল লক্ষ্য করে ৩২টি শট নেন রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলাররা। তার মধ্যে শেষ শটে গোল করতে সমর্থ হন বেলিংহ্যাম। ঘরের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদেরই দাপট ছিল। কিন্তু অনেক সুযোগ পেলেও, কিছুতেই গোল হচ্ছিল না। ভাগ্যও রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গ দিচ্ছিল না। শেষমুহূর্তে গোল না হলে ২ পয়েন্ট নষ্ট করতে হত স্পেনের ক্লাবটিকে।
আর্সেনাল বনাম পিএসভি
আর্সেনাল এবং পিএসভি আইন্ডহোভেন- দুই দলের জন্যই ম্যাচটা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রত্যাবর্তনের। আর্সেনালের ফেরা ছয় মরশুম পর, আর পিএসভি-র চার মরশুম পর। তবে এই ম্যাচে শেষ হাসি হাসে আর্সেনাল।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড হেরে গেলেও, ইংল্যান্ডের আর একটি দল আর্সেনাল সহজ জয় পেল। পিএসভি আইন্ডহোভেনকে ৪-০ উড়িয়েই দিল আর্সেনাল। পিএসভি-র বিরুদ্ধে ৮ মিনিটেই আর্সেনালকে এগিয়ে দেন বুকায়ো সাকা। ২০ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান লিয়ান্দ্রো ট্রসার্ড। ৩৮ মিনিটে আর্সেনালের হয়ে তৃতীয় গোল করেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ৭০ মিনিটে চতুর্থ গোল করেন মার্টিন ওডেগার্ড।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যান্য ম্যাচের ফল
- এস সি ব্রাগাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে নাপোলি। প্রথমার্ধের সংযোজিত সময়ে নাপোলিকে এগিয়ে দেন জিওভানি ডি লরেঞ্জো। ৮৪ মিনিটে ব্রাগার হয়ে গোল করে সমতা ফেরান ব্রুমা। কিন্তু ৮৮ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করে বসেন সিকু নিয়াকাতে।
- রিয়াল সোসিয়েদাদের সঙ্গে ১-১ ড্র করল ইন্টার মিলান। ৪ মিনিটেই সোসিয়েদাদকে এগিয়ে দেন ব্রেইস মেন্ডেজ। ৮৭ মিনিটে ইন্টারকে সমতায় ফেরান লটারো মার্টিনেজ।
- ঘরের মাঠে আর বি স্যালজবার্গের কাছে ০-২ হেরে গেল বেনফিকা। ১৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে স্যালজবার্গকে এগিয়ে দেন রোকো সিমিচ। এরপর ৫১ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান অস্কার গ্লুখ।
- লেন্সের সঙ্গে ১-১ ড্র করল সেভিয়া। ৯ মিনিটে সেভিয়াকে এগিয়ে দেন লুকাস অকাম্পোস। ২৪ মিনিটে সমতা ফেরান অ্যাঞ্জেলো ফুলজিনি।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।