সাত বছর পর টেস্ট খেলতে বিলেত পাড়ি দেবে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। একটি টেস্টের পাশাপাশি তিনটি করে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে খেলবে। সেই দলে মিতালি রাজ, স্মৃতি মান্দানা, হরমনপ্রীত কৌরদের পাশাপাশি দলে জায়গা করে নিয়েছেন ইন্দ্রানী রায়। তবে দলে জায়গা পেলেও বিদেশ সফরের জন্য নেই তাঁর পাসপোর্ট। উপরন্তু লকডাউনের জেরে মুশকিল হচ্ছে ফিটনেস বজায় রাখতেও।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝাড়খন্ডের হয়ে খেললেও, আদপে হাওড়ার লিলুয়ার মেয়ে ইন্দ্রানী নিজের বাড়িতে বসেই ছোট বেলার ক্রিকেটীয় জীবন শুরু থেকে ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার লম্বা সফরের কাহিনী ব্যক্ত করলেন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে।
ভারতীয় দলে নির্বাচিত হওয়ার জন্য অনেক অভিনন্দন আপনাকে।
ইন্দ্রানী: ধন্যবাদ।
শুরু থেকে শুরু কার যাক। আপনার ক্রিকেট জীবনের শুরুটা কী ভাবে হল?
ইন্দ্রানী: আমি ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলতে খুবই আগ্রহী। কোন জায়গায় ভাল ট্রেনিং হচ্ছে, কোথায় গেলে আমার আরও উন্নতি হবে সেইদিকে বরাবর নজর থাকত। এইভাবেই আমি আমার প্রথম ক্রিকেট ট্রেনিং সেন্টারে ঢুকি। তবে বাড়ি থেকে আমার পরিবার ক্রিকেট খেলার বিষয়ে সম্মত ছিল না। কিন্তু আমার স্যারের তৎপরতায়, উনি মা বাবার সাথে কথা বলায় আমায় খেলার অনুমতি মেলে।
পরিবারের আপত্তি কোথায় ছিল?
ইন্দ্রানী: আসলে ক্রিকেট বা যে কোন স্পোটর্সেই কেরিয়ারের ঝুঁকি থাকে। ভাল খেললেও অনেকসময় সফল না হওয়ার সম্ভাবনা তো থেকেই যায়। সেই তুলনায় পড়াশোনা করে কোন চাকরি করলে পেশাগত দিক থেকে তা অনেকটাই নিরাপদ। আ্মার বাব মা সেই কারণেই ক্রিকেট খেলার বিরুদ্ধে ছিল, যাতে আমার পড়াশোনায় কোনরকম কোন ক্ষতি না হয়।
অল্প বয়সে বাড়ি পরিবার ছেড়ে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজ্যে চলে যাওয়া কতটা কঠিন ছিল?
ইন্দ্রানী: প্রথম প্রথম পরিবারের কথা বেশ মনে পড়ত। তবে ঝাড়খন্ড দলে সবাই আমাকে খুব তাড়াতাড়িই আপন করে নিয়েছিল, উপরন্তু এখানে আসার প্রায় সাথে সাথেই আমি পারফর্ম করা শুরু করি। ফলে আমার কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়।
বেশ কয়েক মরশুম ধরে আপনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলছেন। কিন্তু মহামারির জেরে গত বছর সব স্থগিত হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দলেও আপনি জায়গা পাননি। তাই এ বছর কি ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও ভাল পারফর্ম করার বাড়তি উদ্যোগ ছিল?
ইন্দ্রানী: তা তো ছিল বটেই। গত বছর লকডাউনের আগে আমার শেষ ইনিংসে আমি অপরাজিত ১৩০ রান করি। তারপর যখন এ বছর আবার বিসিসিআই ঘরোয়া ওয়ান ডে টুর্নামেন্টের কথা ঘোষণা করে, তখন থেকেই আমি মনে মনে স্থির করে রেখেছিলাম কোনভাবেই নিজের পারফরম্যান্সের মানদন্ড কমতে দেওয়া চলবে না। ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফর্ম করার চ্যালেঞ্জ নিই এবং পারফর্ম করতে পেরে আমি খুশি।
সেই টুর্নামেন্টেই তো মিতালি রাজের রেলওয়েজের বিরুদ্ধে আপনারা ফাইনাল খেলেন। প্রতিপক্ষ থেকে এবার মিতালিরই অধিনায়কত্বে আপনি খেলবেন। এই অনুভূতিটা ঠিক কেমন?
ইন্দ্রানী: মিতালি দি সর্বকালের অন্যতম সেরা। ওনাকে দেখেই আমি খেলা শুরু করি। ওঁর সাথে খেলার সুযোগ হবে, একই ড্রেসিংরুমে থাকব, এই অনুভূতিটা যে ঠিক কেমন, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরেও উনি যেভাবে ম্যাচের আগে নিজেকে তৈরি করেন, যে ভাবে নিজেকে ফিট রাখেন, দলের প্রতি ওঁর যে দায়বদ্ধতা, তা এক কথায় অসামান্য। ওঁর থেকে অনেক অনেক কিছু শেখার জন্য মুখিয়ে আছি।
মিতালির পাশাপাশি আপনি আরেক ভারতীয় কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনির রাজ্য ঝাড়খন্ডের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন। ধোনির থেকে কোন পরামর্শ পেয়েছেন বা কোন কথা হয়েছে ওনার সাখে?
ইন্দ্রানী: মাহি ভাই একজন লেজেন্ড। সত্যি বলতে ব্যক্তিগতেভাবে ওঁর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। তবে রাঁচির মাঠে আমাদের প্র্যাকটিসের সময় মাহি ভাই মাঠে এলে সবসময় আমাদের মহিলা দলের জন্য কিছুটা সময় বার করে নেন। নিজের নানা মূল্যবান অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি, আমাদের নানা পরামর্শও দেন।
আপনি একটু আগে চ্যালেঞ্জের কথা বললেন। সাধারণত ঘরোয়া ক্রিকেটে আপনি ওপেনিং করেন। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে সেই জায়গায় স্মৃতি মান্দানা, শেফালি বর্মারা আগে থেকেই ওপেনারের ভূমিকায় ব্যাট করে আসছেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দলে জায়গা করে নেওয়াটাও কি একটা বড় চ্যালেঞ্জ নয়?
ইন্দ্রানী: আপাতত আমার লক্ষ্য একটাই। ব্যাটিং লাইন আপে যেখানেই আমি ব্যাট করতে নামি, আমি যেন দলের হয়ে নিজের সেরাটা দিতে পারি। এই ছোট লক্ষ্য নিয়েই আমি এগোচ্ছি। পারফর্ম করলে বাকিটা আপনা আপনি হয়ে যাবে। আমি শুধুমাত্র দলের হয়ে নিজের সেরাটাই দিতে চাই এবং দলের স্বার্থে সবকিছু করতেই প্রস্তুত।
আমার কানে একটা খবর এসছে, যে আপনার এখনও পাসপোর্ট নেই। কথাটা কি সত্যি?
ইন্দ্রানী: হ্যাঁ, সত্যিই আমারা এখনও পাসপোর্ট নেই। সদ্যই ভারতীয় দলে আমি নির্বাচিত হওয়ার কথা জানতে পারি। তারপরেই সপ্তাহন্তের পাশাপাশি লকডাউনও শুরু হয়ে যায়। এখনও এই বিষয়ে কিছু করা না গেলেও আমি নিশ্চিত এক-দু'দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ক্রিকেটারহিসাবে আপনার পরের লক্ষ্য কী?
ইন্দ্রানী: ধারাবাহিকতাই আমার লক্ষ্য। ধারাবাহিকভাবে যারা ভাল পারফর্ম করে তাঁদেরই লোকে মনে রাখে, তারাই লেজেন্ড হিসাবে গণ্য হয়। তাই ধারাবাহিকতাই আমার লক্ষ্য, যাতে বারবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতে পারি।
সতীর্থ শেফালি বর্মারা তো বিগ ব্যাশ, দ্য হ্যান্ড্রেডের মতো লিগগুলোতে অংশগ্রহণ করবেন। ভবিষৎ-এ ওই লিগে খেলার কোন পরিকল্পনা আছে ?
ইন্দ্রানী: সব খেলোয়াড়েরই তো স্বপ্ন থাকে, আমারও ইচ্ছা অবশ্যই আছে। কিন্তু আমার সামনে আপাতত যে সুযোগ আছে, তার প্রতি সুবিচার করলে তবেই আমি আগে এগোতে পারব। তাই আমি ছোট ছোট পা ফেলে এগোতে চাই। বাকি সব সুযোগ তো ভাল খেললে পাবই। তার জন্য তো অনেক সময় রেয়েছে।
সব শেষ জানতে চাইব ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় আপনার মা-বাবার প্রথম প্রতিক্রিয়াটা ঠিক কী ছিল?
ইন্দ্রানী: আমার মা-বাবা ভীষণ খুশি। ভারতীয় দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে খেলতে যাওয়া যে কোন পরিবার, বিশেষত বাঙালিদের জন্য এক বিশাল বড় ব্যাপার। ওরা খবরটা শুনে খুব, খুব, খুব….. খুশি হয়েছিল।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।