জোড়া পদক জিতে দেশে ফিরছেন বাংলার মেহুলি! পরিবারের চোখে এখন কঠিন লড়াই-এর স্মৃতি

বিশ্ব শুটিংয়ের মঞ্চে অনন্য নজির গড়েন হুগলির বৈদ্যবাটির মেহুলি ঘোষ। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ শুটিংয়ের মিক্সড ইভেন্টের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল শুটিংয়ে সোনার পদক জিতলেন মেহুলি। মেয়ের এদিনের সাফল্যের পরে মেহুলির পরিবারের লড়াই ও ত্যাগের কথা ভেসে উঠল।

পদক জয়ের পরে মেহুলি ঘোষ (ছবি-টুইটার)

বিশ্ব শুটিংয়ের মঞ্চে অনন্য নজির গড়েন হুগলির বৈদ্যবাটির মেহুলি ঘোষ। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ শুটিংয়ের মিক্সড ইভেন্টের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল শুটিংয়ে সোনার পদক জিতলেন মেহুলি। বুধবার শাহু তুষারকে সঙ্গে নিয়ে মিক্স ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে নজির গড়েন মেহুলি। বৃহস্পতিবার মহিলাদের দলগত ইভেন্টে রুপো জেতেন তিনি। মেয়ের এই সাফল্যে মেহুলি ঘোষের মা ও বাবা দুজনেই রীতিমতো খুশি। মঙ্গলবার ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ব্যক্তিগত ইভেন্টে অল্পের জন্য ফাইনালে কোয়ালিফাই না করতে পারায় মেহুলি তার মাকে ফোনে বলেছিলেন, ‘একটুর জন‌্য ফাইনালে উঠতে পারলাম না।’ তবে তারপর মায়ের মন্ত্রে ঘুরে যায় মেহুলির ভাগ্য। পদক জেতা শুরু করে হুগলির বৈদ্যবাটির মেহুলি ঘোষ।

মেয়ে ফোন করার পরে মেহুলির মা মিতালি দেবী তখন মেয়েকে আগে কী হয়েছে, সে সব ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দেনন। একইসঙ্গে পরের ইভেন্টের জন‌্য মনঃসংযোগ করতে বলেন। মায়ের এই কথায় মেহুলি অনেকটাই অনুপ্রাণিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত বুধবার তুষার মানকে সঙ্গে নিয়ে মিক্স ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে নজির গড়েন মেহুলি। বৃহস্পতিবার মহিলাদের দলগত ইভেন্টে রুপো জেতেন তিনি।

তবে মেয়ের এদিনের সাফল্যের পরে মেহুলির পরিবারের চোখে ভেসে উঠল কঠিন লড়াই ও ত্যাগের স্মৃতি। কেউ সেই লড়াইয়ের দিন গুলো আজও ভোলেননি। সকলেই জানেন কী ভাবে লড়াই করে আজ মেহুলি এই জায়গায় এসেছে।  বাবা নিমাই ঘোষ একটি আধা সরকারি সংস্থায় খুব সামান্যই রোজগার কাজ করতেন। তিনি মেয়েকে বলেছিলেন তার আর্থিক সামর্থ্য নেই। কিন্তু তারপরও মেয়ে কান্নাকাটি করত। শেষ পর্যন্ত দিদিমা মঞ্জু পালের ইচ্ছাতেই রাইফেল শুটিংয়ে ভর্তি হন মেহুলি। প্রথমে শ্রীরামপুর রাইফেল শুটিং ক্লাবের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পরে কলকাতার নিউটাউনে জয়দীপ কর্মকারের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে মেহুলি। মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য মা মিতালি ঘোষ নিজের সোনা বন্ধক দিয়ে রাইফেল কিনে দিয়েছিলেন। মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে দিনের পর দিন আধপেটা খেয়ে সল্টলেকের অ্যাকাডেমির বাইরে অপেক্ষা করতেন মেহুলির মা।

তেরো বছর বয়সে রাইফেল শুটিং -এর হাতেখড়ি মেহুলির। ২০১৪ য় বেলগাছিয়ায় স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে রুপোর পদক জিতে প্রি ন্যাশনাল শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য মনোনীত হন মেহুলি। আমেদাবাদে প্রি ন্যাশনাল রাইফেল শুটিংয়ে অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জ পদক জিতে ন্যাশনালের জন্য মনোনীত হন। তবে ন্যাশনালে সেভাবেই দাগ কাটতে না পারলেও হাল ছাড়েননি মেহুলি। ২০১৭ ন্যাশনাল ইউথ জুনিয়ার এন্ড সিনিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপে একসঙ্গে ন’টি মেডেল জিতে চ্যাম্পিয়ন হন মেহুলি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এবার বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে জোড়া পদক জিতে দেশে ফিরছেন মেহুলি ঘোষ।